বাংলা রম্য গল্প | আলুমামার রমজান \\ পর্ব নং ১

বাংলা রম্য গল্প  | আলুমামার রমজান \\ পর্ব নং ১ 





১.
রমজানের এক দিন আগেই আমার ছুটি দিয়ে দিয়েছে।
আমি আবার ছুটির দিনে নানা বাড়ি ছাড়া থাকতে পারিনা।
প্রায়ই বছরের অর্ধেকটা সময় আমি থাকি নানা বাড়িতে।
তাদের আদরের কারণে এতো টান।
এবারতো আব্বু আসতেই দেবে না। কিন্তু অনেক টানা হেচড়ার পর আসতে পারলাম। খুব আনন্দ হচ্ছে। আমার বাড়ি থেকে নানা বাড়ি একটু দূর প্রয়াই ১০মিনিটের পথ সাইকেল দিয়ে আজ সময় যাচ্ছেনা।

২.
কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই পৌছেগেলাম আমার প্রিয় নানা বাড়ি। নানাভাই আমাকে দেখেই খুব খুশীর সাথে আমাকে স্বাগত জানালেন। নানা বললেন,
"কিও নানা! কখন আইলা?"
"আসসালামু আলাইকুম "
থতমত খেয়ে উত্তর দিলেন,"অলাইকুম আসসলাম। কখন আইলা?"
"ভালো আছেন নানা?"
আবারো কনফিউজড, "আলহামদুলিল্লাহ! তুই?"
"আলহামদুলিল্লাহ।  মামা আর নানু কই?"
"তোর নানু ভিতরে কিন্তু মামা বাড়িতে নাই। আর শোন আইছোস ভালো কথা অই শুয়ারটার কথা কবি না"
হঠাৎ মামা আগমন, "অই মিয়া অই শুয়ার কইলেন কারে?"
"তোরে কইছি কি করবি?"  রাগ অবস্থা নানা ভাই।
"সত্য আমারে কইছেন? কিয়ারে কইছেন?"মামাও ছাড়বার পাত্র নয়।
"তোর লগে থাকলে পোলাডায় নষ্ট হইয়া যাইবো।"
"কিয়ারে সিগারেট বিড়ি খাইনি। আমনেতো খান।  আমনের লগে চললে জিহাদ খারাপ হইয়া যাইবো"
"কি তুই এইগুলা আমারে কইসস?" পুরো রাগে  তার শরীর লাল হয়ে আছে।
এই সময়ে আলুমামার হাসির উত্তর "আমনেরে না পাশের কেলা গাছেরে কইসি" এই বলে ঘরের দিকে চলে গেল আমাদের আলুমামা।
"দেখসস শুয়ারডার কি অবস্থা। বেয়াদব আমার লগে থাকলে তুই বলে খারাপ হইয়া যাবি? এই শুয়ার প্রতিদিন আমার ঘরের ২কেজি আলু খায় আর এই শুয়ারডায় আমার নামে বদনাম দেশে ছড়ায়।"
আমি বললাম, "সমস্যা নাই নানা! কালকের থেকে রোজা শুরু।  খাওন দিবেন না। "
"ঠিক কইসস। ভালো একটা বুদ্ধি দিসস। খাওন দিমুনা এবার দেখমু কেমনে আলু খাস। শুয়ার কোথাকার।"
বক বক করতে করতে চলে গেলেন নানা।

৩.
সেহারী টাইম:
মনে করেছিলাম মামা রোজা রাখবেনা।কিন্তু সেহারীতে উঠে দেখলাম মামা আমাদের সাথে সেহারী খাবে।
আমরা খাইচ্ছিলাম। এই সময় মুখ ধুয়ে এসে বলে,
"আমারে খাওয়ন দেও! আমিও রোজা ধরমু"
"আরে কি দিন আইলোরে।  পাগল ছাগলরা রোজা রাখে।" নানা বললেন।
" উহ্! কোন স** মালানা আইছেরে। অই মিয়া দাড়িতো রাখছেন হুদাই মানুষ দেখানের লাইগা। নামাজ কি পড়েন..?" নানাকে অপমান করে বলল।
"ওই কতা কবি না। নইলে জুতা দিয়া পিটামু।"  নানা বলল
"আরে চুপ করোতো।  সেহেরির টাইম যায় না হয়?" নানু বলল।
যাক লাষ্ট ১০মিনিট আগে খেয়ে আমি সবার খাবার ছেড়ে উঠলাম।আমার ওঠার প্রায় এক মিনিট পরেই মামা খাবার ছেড়ে উঠলেন।তিনি উঠে মোবাইল নিয়ে বসলেন।আমি বললাম,
"মামা নামাজ পড়তে যাইবেন না?"
"যামু যামু ফেসবুকে একটা পোষ্ট কইরা লই।"
মামার পোষ্ট আমি দেখার চেষ্টা করলাম। দু'মিনিট পর নানা আসলো। এসে দেখলো মামা মোবাইল নিয়ে বসে আছে।তখনই নানা চিৎকার,
"শুয়ার। রোজা রমজান দিন তুই মোবাইল টিপস কিয়ারে?"
"রমজান মাসে আমনে গালাগালি করেন ক্যা? হেইডা মন হয় জায়েজ আছে?" নানু বলল।
অতঃপর একগাদা  গালি থেকে মামাকে বাঁচিয়ে দিলো নানু। নামাজ পড়ে আর কেউ ওয়েট করলো না  সোজা এক ঘুম। এই ঘুম কি আর থামে। এই ঘুম সেই ঘুম।

৪.
সকাল ১২।
এই ওঠ! আর কত ঘুমাবি তোরা। নানা আমি আর মামা ঘুমিয়ে আছি একসাথে।  আমি ওঠে দেখি। দুই জন দুইজনের গায় লেপ্টালেপ্টি করে ঘুমিয়ে আছে। আমি ওঠার সাথে ওরা দুইজনি ওঠে গেল। মামা নানাকে দেখে বলল,
"এইজন্যইতো কই আমার পাশের কুত্তামরা কুত্তামরা গন্ধ কইথেইক্কা কয়।"
"কি কইলি?" নানার সেই চিরচেনা চিৎকার।
"হাচা কইরা বলেন তো। আইজকের দিন লইয়া কয় দিন গোসল করেন না?" মামার প্রশ্ন।
"তুই কি মনে করস। আমি আগোসইল্লা,অপবিত্র।" নানার সোজা উত্তর।
"ধন্যবাদ!  আন্নেরে নিজের আসল পরিচয় সবারে বলার জন্য। কতো কষ্ট হইতো আন্নের মুখের থেইক্কা এই কথা  বাহির করা।"
এই কথা বলে মামা সোজা রুমের থেকে বের হয়ে গেল।
নানা থতমত খেয়ে গেল মামার কথা শুনে।
আজ প্রথম রমজান তাই সকাল বেলা নাস্তার ঝামেলা নাই। কিচ্ছুক্ষণ বাহিরে হাটাহাটি করার পর বাড়িতে এসে নানু কুরআন তিলাওয়াত করছে। খুব ভালো লাগছে।

৫.
যোহরের নামাজ পরে নিলাম।বাড়িতে আর আসলাম না মসজিদেই ঘুমই পড়লাম।ঘুমের থেকে উঠে দেখি আমি শুয়ে আছি নিজের রুমে। অবাক করা ব্যাপারটা আমাকে থমকে দিলো। আর আমার গায় ব্যাথা অনুভব করলাম।
তারপরও বিছানার থেকে উঠে শরীরটা একটু নাড়িয়ে চাড়িয়ে বাজারের দিকে হাটতে গেলাম।
বাজারে হাটছি হাটছি হঠাৎ পিছনের থেকে একটা আওয়াজ অনুভব করলা।
"জিহাদ.....!"
পিছনে ফিরে দেখি আমার ক্লাসমেট নকিব।
"কিরে গরুর মতন চিল্লাচিল্লি করতাসস ক্যা?" আমি বললাম।
"তোরে নিয়া তোর মামা আর নানায় যেই কাহিনী করসে।"
"কি করসে?"
"তাইলে হোন। তোর মামা প্রথমে আইসে তোর নানাও আসিয়ে। দুইজনের উদ্দেশ্য ছিলো তোরে ঘুম অবস্থা নেওয়া যাইবো। তোর মামায় কইলো,
"এই মিয়া বাড়িতে মোস্তানি দেখান ভালো কতা। কিন্তু আমি ওরে এখন নিয়া যামু এহানে ফাইজলামি করবেন না। "
"অই বেডা অই তোর লগে কিয়ের ফাইজালামি করমু হ্যাঁ আমার নাতিরে আমি নিমু তোর কি?"
" আপনার নাতি মানে আমারও ভাইগ্না। আমি নিমু।"

তারপর তোর শরীর নিয়া টানাটানি মারামারি করা শুরু কইরা দিলো। এসময় সঠিক টাইমে এন্ট্রি নিলেন মসজিদের সভাপতি।তিনি তোর নানাকে বললেন,
"কি মিয়া আমনে নিজের পোলার লগে ঝগড়া করেন মসজিদের মধ্যে। আর আমনে সব কাম করাইবেন আপনার পোলারে দিয়া আর আমনে নিজেই করতে চান। আপনার বয়স হইচ্ছে না।"
তোর নানা চুপ করে রইলো। তারপর আবার সভাপতি সাহেব কইল, " যাহ শামিম ওরে লইয়া যাহ"
তারপরে তোরে লইয়া তোর মামা নিয়া যায়। "
আমি ওর কথা উত্তর না দিয়ে ডাইরেক্ট সামনের দিকে হাটতে লাগলাম।

চলবে.....

লেখক : শোক্ষকোন আহম্মেদ। 

মন্তব্যসমূহ