আলুমামা। বাংলা রম্য গল্প।

আলুমামা

শুক্ষকোন আহম্মেদ


১.
"যাহ্‌ ঘরের থেকে বাহির হো"
"ঘর কি আমনের নি?"
"তো কার ঘর?"
"যার ঘর, তার ঘর"
"যাহ্‌ ঘরের তোন বাইরা"
"আমি এহন কই যামু?"
"তোর চোখ যেমনে যায়, তুই হেমনে যাহ"
এসময় নানু এসে বলল,
"আন্নে ছেমড়া ডার লগে এরকম করেন ক্যান"
নানার উত্তর,
"এই আলু খাওউনা পোলার হই তুমি কথা বইললনা।"
"থাকে আইজা মাফ করি দেন"নানু বলল।
"এই আক্যামাই পোলাডারেঘরে রাখলে আমার অন্ন ধ্বংস হইবো"
মামার কঠিন প্রতিবাদ নিয়ে বলল,
"আম্মা এইতে আমারে আক্যাইমা কয় ক্যান? আমার এলাকায় একটা প্যাজটিশ আছে না।"
"এহ কি প্যাশটিজয়ালারে, আলু খোর। এরে হোন তুই একটু গুনি ক চাই। তুই জন্মের তোনে তুই কত কেজি আলু খাইছোস?"
"আরে কেজি না না? আর কত বাংলাদেশের এ বছরের বাজেট কত?"
"মুই জানি না"
"যত বাজেট তত কেজি আলু আমি খাইছি"
"ওহ! আচ্ছা"
আস্তে কেটে পড়তে চাইলো আমাদের আলু মামা থুক্কু
আমাদের শামিম মামা। মামার প্রচন্ড পরিমাণ আলুর নেশা। আর বুদ্ধিতে ভরা মাথা। কোন কাজ করে না আমাদের আলু মামা। আমাদের খারাপ মনে ভালো করার জন্য মামা একাই যথেষ্ট। আমার মামা কোন দোকানে যদি খেতে বসে এক প্লেট ভাতের সাথে ১০প্লেট আলুর তরকারি খায়। মামা একটু সাইজে মোটা।
আজকে এক দোকানে নানার প্রিয় সাইকেল বিক্রি করতে দিয়ে সে নিজে ইচ্ছা মতো খেয়েছে।
২.
নানা বহু কষ্টে তার সাইকেল টাকা ফিরত দিয়ে আবার এনেছে। সাইকেলটা সামনের ঘরে রেখে যখনি পরের ঘরে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার সাইকেল ছিলো। সেই সাইকেল নিয়ে আমি ঘুড়তে বেড়ারনোর জন্য বেরহলাম।
দেখলাম আমার পাশে নানার সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলু মামা।
"মামা আম্মে সাইকোল নিয়া আইছেন দাদায় কিছু কয়বোনা?"
"ধুর বেডা"
"মিয়াঁ.... "
"কিছু কইয়না সাহস আছে?"
"হুম!"
সাইকেল নিয়ে বেড়েইয়ে পড়িছিলাম গভীর অরণ্যে।
খাল-বিলের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি আমরা। বৈশাখ মাস ছিলো। দেখলাম পশ্চিম আকাশে দেখলাম ঘন কুয়াশা আচ্ছন্ন। আমি বুঝছি যে, হ্লাকা হোক আর কঠিন হোক বৃষ্টিতো হওয়ার সম্ভবনা বেশী। মামাকে বললাম,
"মামা বৃষ্টিতো না খাইয়া একটা আইবো মনে হয়"
"কি কস? নাহ আসবো নাহ মনে হয়"
"আসলে কি করবেন? অই দেহেন পশ্চিম আকাশ কি ঘন মেঘ।"
"আইলে বৃষ্টি আইবো। আমাগো কি? বৃষ্টি সাইকেল চালানো আরেক মজা।"
থেমে গেলাম আমি যেহেতু মামা ভিজতে চান। সেখানে আমার কি করার।
আমি সাইকেল চালাতে খুব পটু। স্লো সাইকেলিং,বিনা হাতে সাইকেল চালানো,এবং খুব জোরে সাইকেল চালানোতে পটু আমি। তাই মনের আবেগে হাত ছেড়ে সাইকেল চালচ্ছি। আর মামাকে বলচ্ছি,
"দেখছেন মামা আমি কত সুন্দর করি সাইকেল চালাই"
"ধুর বেটা,এই গুলা কোন ব্যাপার?"
"হুম!!! আপনিতো বেশি পারেন তাই সমস্যাতো নাই"
"ধুর। এসব আমাগো সোরহাবে করতে পারে।
(সোরহাব আমার ছোট ভাই)"
"তাইলে আমনে করেন"
"কি যে বলছ?এই গুলা আমাগো কাছে কোন ব্যাপার!"
হাত ছেড়ে চালানোর চেষ্টা করছিল মামা। কিছু মিটার মামা হাত ছেড়ে চালাতে সক্ষম হয় তারপর আবার হ্যান্ডেল ধরে ফেলে।
"দেখসস! আমরা পারি না এমন কোন জিনিশ আছেরে?"
"আবার করেন দেহি"
"ইসস!"
"ধুর পারেন না যে হেইডা কন?"
"দেখ"
এবার কাকা ডাবল আত্মবিশ্বাসের সাথে হ্যান্ডেলের থেকে হাতটা ছেড়ে দিলো।এবারো মনে হয় পারবো আমার চোখগুলো তার সাইকেলের দিকে।
হঠাৎ দেখলাম তিনি থাকলে নাই আমাদের নানার সাইকেল। আমি ব্রেক দিয়ে থেমে খুজতে থাকলাম সাইকেলটা। কোথায় গেল?
"মামা সাইকেল কই?"
আমার সাইকেলের ব্যাক সিটে মামা উঠে বলে,
"চালা নইলে শুয়ারহোগ্গোল আমাগোরে কুত্তার মতো পিডাইবো"
আমি চালাতে লাগলাম। আমার সর্বোশক্তি দ্বারা চালাতে লাগলাম অনেক দূর তারপরে আবার মামা পিছনে সাথে বৃষ্টি ফ্রি।প্রায় কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে গেলাম নানা বাড়িতে। আমাদের বৃষ্টি ভেজা দেখে ঘরের থেকে গামছা আনলো।আর বলল,
"কিরে বাবা। কইতোন আইলি। ধর গামছা"
গামছা নিয়ে মামা বলল,
"আর বইলো না! সাইকেল চালানো যে কত বড় কষ্ট"
"হ রে বাবা,তাইলে চালাচ্ছস ক্যান?"
"আর কইওনা"
"আচ্ছা"
আমি মামাকে বললাম,
"সাইকেলটা কই?"
"তুই হয়তবা দেখস নাই"
"কি কি দেখি নাই?"
"তুই নিশ্চয় দেখস পাশে টয়লেট ছিলো?"
"হু-উ-ম"
"আমি হ্যান্ডেল না ধইরা চালাতেছিলাম তখনি নিয়ন্ত্রন হারাইয়া ডুকাইউয়া দিলাম পাশের লেটিনে"
"আই হায় কি করলেন?"
"যা করছি করছি। আরো করছি"
"কি?"
"টয়লেট পরিষ্কার করতাছিলো একটা নেথর। বেচারা টয়লেট বাহির থেইক্কা পরিষ্কার করতাছিলো। সাইকেলটা নেথরের পিছন থেকে সাইকেল দিলো ধাক্কা শুয়ারডা পড়ল লেটিনের ভিতরে। সাইকেলটা কোন রকম বেচেঁ গেলো। কিন্তু আনতে পারলাম না"
"নানায় হোনলে আমনেরে মারবো না?"
"ধুর বেডা তোর নানারে আমি ডরাই"
"হু-উ-ম। মাইর খাইলে বুঝবেন"
"ধুওওওরু বেডা"
খেয়ে দেয়ে দুপুরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
৩.
বিকালে ঘুম ভাঙল নানার উচ্চকণ্ঠের চিৎকার দ্বারা।
আমি উঠলাম উঠানে নানার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।
নানার কাছে যাওয়া মাত্রাই আমাকে লাঠি দিয়ে কঠিন ভাবে মারাতে শুরু করলো নানা। আর বলল,
"শুয়ার যাহ, সাইকেল লইয়া আয়।নইলে ওরে পিডাইতে থাকুম"
"আমনে ওরে মারেন কা?আমি দোষ করছি আমার মারেন "
"যাহ শুয়ার সাইকেল লইয়া আয়"
"আচ্ছা!আইতাছি"
মামা একটা দৌড় দিলো সাইকেল আনার জন্য। মামা আমাকে প্রচন্ড রকম ভালবাসাতেন। নানাও বাসতেন কিন্তু শুধাশুধি আজ কেন মারলেন বুঝলাম না।
নানা মারা বন্ধ করলেন। আর বললেন,
"কিছু মনে করিছ না ভাই! অই শুয়ারটারে পাঠানোর এই একটা পদ্ধতি ছিলো মাফ করে দিছ"
"ওওও। নানা কি হইচ্ছে?"
"আর কইছ না। অয় সাইকেলসহ এক নেথররে ধাক্কা দিয়ে টয়লেটের মাঝখানে ফালাইয়া দেয়। ভাগ্য ভালো টয়লেটে হা** বেশী ছিলো না। এখন আমা সাইকেলা আটকাছে"
"মামা কি পারবো?"
"কে জানে"
আমার মনে হয়েছিলো সে পারবে না। কিচ্ছুক্ষণ আমি দরজার কাছে বসে বসে অপেক্ষা করছিলাম মামার জন্য কিন্তু মামা কি আসে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসল।আমি মসজিদে গেলাম।
৪.
মসজিদ থেকে বাড়িতে আসলাম। আমি বাড়িতে ঢুকার পর পর মামার কণ্ঠ শুনতে পেলাম,
"অই দুয়ার খোল!নইলে ভাইঙ্গা লামু"
"খুলতাছি"
আমি অবাক হয় তাকিয়ে রইলাম কি আনল কাকা।
সাইকেলটা ফিরিয়ে এনেছে।
"মামা এইডা কেমতে সম্ভব"
"দাড়া কইতছি। তোর নানা বাড়িত আছে?"
মামাকে নিয়ে ফ্যানের তলে বসলাম,
"তাইলে শোন, ওই বেডায় বেশী চালাক ছিলোনা। কিন্তু অত্যাচারী ছিলো বটে। আমার জমাইনা কিছু টিয়া ছিলো। তাই জরিমানা হিসাবে সেই গুলাই দিমু। কিন্তু শুয়ার টায় আরো বেশী দাবী করে।তাই আমি কি করছি। একটা প্যাকেটে কইরা জর্দা আনছিলাম আমার আম্মার লাইগা। আমি তার লগে আস্তে কইরা ঝগড়া বাজাইয়া দেই। কঠিন ঝগড়া আমি তার পকেটে আস্তে করে জর্দা প্যাকেটটা ডুকাইয়া দেই। তুই জানস জর্দার প্যাকেটটা প্রায় গাঞ্জার প্যাকেটের মতো দেখা যায়।
আমি কইলাম,
"অই বেডা তোর পকেটে এইডা কি" পাশে কোন লোকজন ছিলোনা।
"কই কি?"
"অইযে গাঞ্জার প্যাকেটের মত দেখে যায়"
"তা বেডা। কি কস" সে প্যাকেটটা শুখবার আগেই আমি নিয়ে নিলাম।
"ওরে আল্লারে এইডাদে খাটি গাজা। তুই এই কাম করস কবের তনে।" সে ভয় পাইয়া গেছে।
"নারে ভাই।" আমার হাতে ফোনডা দিয়া আমি ১২৩কল দেয়।কিন্তু ওয় ভাবে আমি পুলিশেরে ফোন দিছি। হ্যেইয়া আমার সাইকেল থুইয়া এক দৌড়। "
আমি হাসতে হাসতে ব্যাকুল।

মন্তব্যসমূহ