মিসন স্নেকহেড | আ্যাডভেঞ্চার উইথ ভেনম | পর্ব ১ | সূক্ষকোন আহম্মেদ |










মিশন স্নেকহেড,<br /> অ্যাডভেঞ্চার উইথ ভেনম (পর্ব ১)


মিশন স্নেকহেড
,অ্যাডভেঞ্চার উইথ ভেনম (পর্ব ১) By সূক্ষকোন আহম্মেদ।





'ডেভিড ভেনম পুরো রেগে গেছে। এখব সব ভেঙ্গে ফেলবে। ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দেবে তোমার এই সাধের ল্যাব। কিছুক্ষণ পরেই মেডেসিনেত কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। '
'কিচ্ছু হবে না। আরো কিচ্ছুক্ষণ অপেক্ষা করো। ভেনমকে যদি আগের সাফিদে পরিণিত না করতে পারি তাহলে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ছেড়ে দেবে সাথে বিজ্ঞানীগিরিও বন্ধ করে দেবো।'
ডেভিড অনেক চেষ্টা করছে সাফিদকে ঠিক করার জন্য। ডেভিড হলো জন্মসূত্রে বৃটিশ কিন্তু পৈত্রিক সূত্রে বাংলাদেশী। আমরা হলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটা বিশেষ স্কোয়েড। যার কাজ হলো দেশের খাতিরে তারা খুবই মারাত্মক অভিযানে যায়। যা আসলে খুবই ভয়ানক। প্রতেক টিমে পাঁচজন সদস্য। যাদের খুবই সূক্ষ্মতার সাথে ট্রেনিং দেওয়া হয়। প্রথমে তাদের নির্বাচন করা হয় পুরো সেনাবিভাগ থেকে। একেকটা স্কোয়েডের মেয়াদ থাকে পাঁচ বছর। সব স্কোয়াডের নাম দেওয়া হয় তাদের ব্যাচ অনুসারে। যেমন আমাদের স্কোয়েডের নাম বিডি স্পেশাল ফোর্স - ৪। আমরা চার নাম্বার ব্যাচ। আমাদের দলের পরিচয় দেই। আমার নাম তৌফিক। আমার হাইট ছয় ফুট এক ইঞ্চি। অনেক লম্বা হওয়ায় সহজে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে পারি। এছাড়া গুন দেখি না। আমাদের অন্য সদস্যরা নিজে জায়গা থেকে সবাই মেধাবী, শক্তিশালী, পরিবেশ ও জীব বিজ্ঞানী।
আর আমার ভিতরে আমি কিছুই দেখি না। আমাদের লিডার রাকিব ভাইতো বলে আমার কমনসেন্স নাকি এক কোটি লোকজনের মধ্যে একজনের হয় আর আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নাকি অনেক প্রখর।
গ্রুপের দ্বিতীয় সদস্য হলো সাফিদ। ওর ব্রেন কম্পিউটারের চেয়ে ফার্স্ট। আমাদের তথ্য ব্যাংক। ওর জ্ঞান পরিধি আমার জানা নেই কিন্তু আজ প্রায়ই সাড়ে চার বছর হয়ে গেছে ওর সাথে কাজ করছি। আজ পর্যন্ত কোন তথ্য আমাদের ভুল দেয়নি। কিন্তু ওর দুর্বলতা হলো ওর শক্তি একবারে নেই। এবার হয়তো প্রশ্ন আসবে, একজন সেনা হয়ে কিভাবে তার দেহে পর্যাপ্ত শক্তি নেই? এর পিছিনে একটি কাহিনী আছে।
আমাদের এই টিমের মেয়াদ শেষ হতে বড় জোর ছয়মাস। আজ থেজে সাড়ে চার বছরে যখন আমরা দলে যোগ দেই তখন সাফিদের শক্তি, উচ্চতা ইত্যাদি ইত্যাদি সব ঠিক ছিলো। এভাবে প্রায়ই চার বছর এক সাথে অভিযানে যাই। আমরাই প্রথম যারা এই স্কোয়াডে থেকে চার বছর একসাথে দেশের জন্য কাজ করছি। এখনো আমাদের কোন সদস্য নিহিত হয় নাই।
ফ্রেব্রুয়ারী মাস চলছিলো তখন সাফিদ হঠাৎ ছুটি দরকার কিন্তু আমাদের টিমে পাঁচ বছরের ভিতরে কোন ছুটি নেই। তার মা মারা গেছে। চিঠি আসছে তার নামে।
কোনভাবেই ছুটি দেওয়ার নিয়ম নাই। কোনো একভাবে রাকিব ভাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে চলে গেলো বাড়িতে। যা আমাদের চারটি ব্যাচের ভিতরে প্রথম লোক যেকিনা টিমে থাকা অবস্থায় বাড়িতে যায়। রাকিব ভাই আমাদের সবাইকে আমরা রাজী হয়ে যাই। আমরাও বোকার মতো তাকে তার বাড়িতে যেতে দিলাম যদি আমরা এটা প্রতিফলন জানতাম তাহলে হয়তো কখনওই যেতে দি। যেতে তাকে কিন্তু এই কথা হাই কমিশনকে জানানো হয় না। তাকে পাঁচ দিনের ছুটি দেওয়া হয় । চলে যায় সে তার গন্তব্যস্থলে। যেহেতু আমাদের প্রায়ই দিন পনেরো ছুটি ছিলো তাই তাকে দিলো। কিন্তু নিয়ম ছিলো সে প্রতি পাঁচ ঘন্টায় সে আমাদেরকে তার অবস্থান আর তার অবস্থা আমাদেরকে জানাবে।
প্রথম চব্বিশ ঘন্টায় আমাদেরকে পাঁচবার রিপোর্ট করলেও পরের পুরো চারদিন কোন কিচ্ছু বলেনি আমাদের। কোন খোঁজখবর নিতে পারিনি আমরা। কিছুই করার ছিলোনা আমাদের কারণ আমরা উপড় মহলকে না জানিয়ে আমরা তাকে ছুটি দিয়েছি তাই আমরা চাইলো হাই কমিশনকে অভিযোগ করতে পারবোনা।
প্রতিদিন আমাদের টিমের বাকি সদস্যরা প্রচন্ড মানসিক চিন্তায় থাকতো যদি মারা যায় সাফিদ তাহলে আমরা হাই কমিশনকে কি জবাব দিবো?
প্রতিদিন আমার কাছে এসে রাকিব ভাই বলত,
' আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল হলো সাফিদকে ছুটি দেওয়া। যদি পাঁচ দিনের ভিতরে যদি ফিরে না আসে তাহলে আমরা কি করবো আমরা? কি করার থাকবে আমাদের? '
নিত্যদিনের দিনের মতো আমি চুপ করে থাকবে যেন আমাদের বাকশক্তি এই প্রশ্ন করার সাথে সাথে হারিয়ে ফেলেছি। পাঁচদিন শেষ হতে যখন আর এক বাকি।
তখন আমরা সাফিদের আশা ছেড়ে দেই। আর আমরা একটা সিধান্তে পৌঁছায় যে হাই কমিশনকে ব্যাপারে খোলসা করে বলব। এছাড়া অন্য কোন রাস্তা ছিলো না তখন। যেমন আমরা ছিলাম পথ বন্দি। গোলাকার বৃত্তের ভিতরে বোধহয় কেউ আটকে রেখেছে আমাদের।
আমরা সারারাত চিন্তায় কেউ ঘুমাতে পারি নি। যেন আমাদের উপর ঘুম রাজ্যের রাজার অভিশাপ লেগেছে আমদের উপর। আমরা সবাই ধরেই নিয়ে ছিলাম। আমার আর টিম নিয়ে এগুতে পারবো আমরা সবাই বহিষ্কার হবো। আর আমাদের হবে জেল। সকালে ঘুমের থেকে উঠে আমার তাবু থেকে বেড়িয়ে আমি ওয়াশরুমের কাছেই যেতে দেখি সাফিদ হাজির। আমি সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি। সবাই অবশ্য আমার আগেই ঘুমের থেকে উঠেছে। তারা দেখে সবাই হতবাক। যেন কথা বলার শক্তিটুকু হারিয়ে গেছে কৃষ্ণগহ্বরে। প্রথমে দেখে ব্যাপারটা কেউই হজম করতে পারলো না সহজেই। আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে যেন সে আমার মেলায় হারানো ভাই তাকে বিশ বছর পরে খুজে পেয়েছি। এরকম চাহনিতে তার দিকে তাকিয়ে রইয়েছিলাম নিঃশব্দে। শুধু আমি না বাকি সবাই তাদের চোখে আমার মতো চাহনি যুক্ত করে তাকিয়ে রইলো সাফিদের দিকে।
' আমি কি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবো। ' উদ্ভট ভঙ্গিতে বলল সাফিদ।
' আগে বল তুই কোথায় ছিলি? তোর কাছে টিমের কোন মূল্য নেই। যদি কোন একভাবে যদি তুই যে ক্যাম্পে জানাজানি হতো? তখন কি করতাম? ' আমিই শুধু বললাম সবাই অনড়গোল তার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারা বোধহয় এখনো ভ্রমের ভিতরে আছে।
সাফিদ।
' সাফিদ? সাফিদ? কথা বলছিস না কেনো? ' আমি তার ঘাড়ে আমার দুহাত দিয়ে ঝাঁকি দেই। সে তার হাত দিয়ে আমার হাতকে পাশে ফেলে দেয়। ' আমাকে সাফিদ ডাকবেন না? ' বলল সাফিদ। পাশে সৌমিনা গিয়ে তার দিকে গিয়ে বলল, ' তোকে সাফিদ বলব নাতো কাকে বলবো? ' এটা বলার সাথে সাথে ' আমি ভেনম ' বলে চিৎকার দিলো আর অস্বাভাবিক ধাক্কা দিলো সাফিদ সৌমিনা। যা দেখে আমার মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছে যেন সাগরে ভিতরে আগুন লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমি গিয়ে একটা কষে চড় মারি সাফিদকে । একটা চড়ে তার তেমন কোনো পরিবর্তন না দেখে আমি সাথে সাথে আরেকটা চড় মারি। আমি নিজের হাতেই নিজে খুবই ব্যাথা পায়েছি। তাতেও তার কিছুই পরিবর্তন ঘটলো না। কিন্তু সে বেধড়ক রেগে আছে। যদি আজ আমাকে ঠিকভাবে হাতের নাগালে পেয়ে যায় আজ আমার বাঁচার উপায় নেই। আমি পিছুপা হাটতে লাগলাম। সে আমার আমারদিকে আসছে। আমার পাগুলো অবশ হয়ে আসছে। পিছন থেকে রাকিব ভাই আর ডেভিড সাফিদকে আটকানোর চেষ্টা করলো বরং ফলটা আরো উল্টো হলো দুইজনকে দুটো ঝাটকা মারলো সবাই তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য। আজ যেন তার গায়ে অসুরের মতো শক্তি আসলো। এতো শক্তিতো সাফিদের নেই তাহলে এটা কে? ভেনম?


জোড়ে সোড়ে নিঃশ্বাস নিলাম আমি। একটুর জন্য আজ আমি মরেই যেতাম। আল্লাহ সঠিক সময় সৌমিনাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। সৌমিনা যদি ডেভিডের তাবু থেকে যদি মেডিসিন অব ডিপ্লোপেইড ইনজেকশনে করে না নিয়ে আসতো আর যদি আর সাফিদের উপরে পুশ না করতো তাহলে আজ প্রাণটা আমার যেত। যাইহোক ডেভিড সাফিদকে মানে ভেনম আবার পুনরায় সাফিদ বানানোর চেষ্টা করছে।ভেনম আমাদের সবাইকে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু নড়াচড়া করতে পারছেনা। প্যারালাইজড বলা যেতে পারে তাকে। খেয়াল করে দেখলাম ভেনমের মারাত্মক স্বাস্থ্য । মাত্র পাঁচ দিনে বডি মাসসেল অসম্ভব। যেনো কেউ তার ভিতরে হাওয়া দিয়ে দিয়েছে। হিংসে হচ্ছে অবশ্য। আমি দাঁড়িয়ে আছি চুপচাপ। হঠাৎ রাকিব ভাই আমাদের ল্যাবে ঢুকলো। আসলে ল্যাবের জন্য আলাদা তাবু আছে।
' টিম! আওয়ার নেক্সট মিশন ইজ "মিশন স্নেকহেড"।' জোড় দিয়েই বলল রাকিব ভাই। একটু থেমেই আবার বলল।' স্নেকহেড। একধরণের মাছে যেগুলো মাছের মতো শরীর বাট মাথা সাপের মতো। তাই এই মাছের নাম স্নেকহেড। সাগর-মহাসাগরের পাশে দেশগুলো এই স্নেকহেডের বসাবাস। এইগুলো খুবই মারাত্মক। আরো অনেক তথ্য আমি জানি না। এইগুলো বলবে সাফিদ। হাই কমিশন থেকে বলা হয়েছে। এরা বাংলাদেশে কোন একভাবে অথবা জলবায়ুর কারণে ঢুকে গেছি। যা বাংলাদেশ প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে তাই যেভাবে হোক 'মিশন স্নেকহেড' আমাদের সফল করতেই হবে।'
' আমার কাছে অনেক তথ্য আছে এই ব্যাপারে। ' বলল ডেভিড।
' সাফিদতো আর সাফিদ নাই। তাকে নিয়ে বোধহয় মিশনে যেতে পারবো না।' বললাম আমি।
' সাফিদ যদি ঠিক না হয় তাহলেও তাকে নিয়ে যেতে হবে। ওহ আরেকটা কথা। আমাদের মিশনে সম্পূর্ণ করতে হলে যেতে হবে আমাজনে। ' বলল রাকিব।
' হোয়াট ইউ সেই? আমাজন?' বলল ডেভিড। পুরো চমকে গেলাম আমরা। কিন্তু রাকিব ভাই যেভাবে বলল যেনো তিনি পাঁচ ছয়বার গেছেন।
' হুঁ। আমরা আমাজন যাবো এই ভেনমকে নিয়ে। ' খুবই ঠাট্টার সুরে বলল তিনি।
রাকিব ভাই কি সত্যি বুঝতে পারছেনা যে কত বড় প্রবলেম হতে পারে তিনি কি বুঝচ্ছেন না? সাফিদ না থাকলে এক সমস্যা ছিলো। এখন আরো বড় সমস্যা।



লেখক কে ফেসবুকে ফলো করুন,

Follow writer on Facebook.




মন্তব্যসমূহ