গভীরতা


আমি গল্প লিখছি না আমি, শুধু জানাতে এসেছি কিছু মানসিকতার পরিচয়,সাকিব ধার্মিক কদম রসুল মাদ্রাসা হতে পড়েছে,নামাজ কালাম এবং পড়া লেখা সব দিক দিয়ে বেশ ভালো,বন্ধু বলতে অনেকেই আছে,সবাই খুব ভালো তবে সে তেমন মিশতে জানে না,তার বন্ধুরা রাত দশটা বাজলেও বাইরে দোকানে বসে থাকে, কেরেম খেলে তবে তার মাঝে এমন কোনো আগ্রহই নেই,আগ্রহের মাঝে আছে টেলিভিশন,টেলিভিশনে মোবি কার্টুন এগুলাই দেখে।
এবার রমজানের একটি ঘটনা বলেই শেষ করবো,রমজানের প্রথম রোজা,সাকিবের সাহরি শেষ হলে তার বন্ধু আব্দুল্লাহ এসে পড়ে, তাকে নিয়ে মসজিদে যাবে,মসজিদে যাওয়ার পথটা অনেক তবু নামাজ পড়ে রেল লাইন দিয়ে হাটতে বেশ মজা,বলা বাহুল্য রেল লাইনের কাছেই সাকিবদের বাসা,নামাজে যাওয়ার সময় চারপাশ দেখলে ভয় করে, কেমন যেন অন্যরকম ভাব,কুকুরের গর্জন ভয়ের মাত্রাটা আচমকিত করে দেয়।আজ তারা রেল লাইনে হাটতে হাটতে চলে আসলো অনেকটা পথ,চলে এলো একটা ব্রীজের পাশে,ব্রীজটা পার হওয়ার সময়ই লক্ষ্য করলো ট্রেন,দুজনেই ভয় পেলো ভীষণ, লাফ দিতেই নিচের পানিতে পড়ে গেলো তারা তারপর আর তেমন কিছুই মনে নেই তাদের, জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে,যখন হুশ ফিরল আব্দুল্লাহকে একটা গল্প বললো সাকিব,এবং সেটা বেশ অন্যরকম,সাকিবের গল্পটি:
যখন বেহুশ ছিলাম মনে হল আমি একটা নির্জন জায়গায়, একটা বুজুর্গ মানুষ গাছ তলায় বসে বলছেন, নেকি দিয়ে কি হবে আল্লাহ?নেকি দিয়ে কি হবে?তোমার আজাবের ভয় করেই বা কি পাবো আল্লাহ কি পাবো?
আমি চলে আসলাম ওনার কাছে,ওনার কথাগুলো শুনে আমার একটু রাগ হল।
গিয়েই সালাম দিলাম,বুজুর্গ মানুষটি একবার ভালো করে তাকালো আমার দিকে,তারপর সালামের জবাব দিয়ে বলল তুমি কি আমার কথার বিরুদ্ধ করতে এসেছো?
আমি একটু ভয় পেলাম,তারপর ও বললাম হ্যা,আপনি এগুলো কি বলছেন?
কিছু ভূল বলেছি?বুজুর্গের জবাব বিনয় কন্ঠে।
আমি বললাম:আচ্ছা এগুলো বলার কারণটা বলবেন?
ওনি একটু মুচকি হেসে বললেন,তুমি ছোট মানুষ এখনো পড়ছো দাখিল তোমায় বলে কি লাভ বলো?
আমি বললাম,দোলনা থেকে কবর অবধি জ্ঞান অর্জন করার জন্য। বললাম,আপনাদের কাছেইত শিখবো ধর্ম জ্ঞান,বলবেন?
বুজুর্গ বললেন,হ্যা,দোলনা থেকে কবর অবধি জ্ঞান খোদাকে চিনার জন্য,নামাজ,রোজা হজ্ব যাকাত খোদাকে পাওয়ার জন্য,তাই না?
আমি একমত হলাম,
তাহলে বলত খোদার ভয়ে নামাজ পড়ি নাকি খোদার প্রেমে নামাজ পড়ি?
জান্নাতের আশায় নামাজ পড়ি নাকি খোদাকে পাওয়ার আশায়?
যাকাত কেন দিয়ে থাকি?নিজেকে পবিত্র করার জন্য নাকি সবাইকে দেখানো আমি যাকাত দিচ্ছি?রোজা কেন রাখি?শুধুই অভ্যাস নাকি খোদা এটা বুঝাতে চান যে, হে আমার বান্দারা দেখো, বুঝো খিদা কি?আচ্ছা আমরা কি বুঝি আল্লাহর বলা কথাগুলো?আমরা কি খোজি আল্লাহকে?সারাবছর না খেয়ে থাকা মানুষের খিদা যন্ত্রনাটা কত সহজ করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, আর আমরা প্রতিবছরে একমাস রোজা রাখি ইফতার আর সাহরির আয়োজনে।
আমরা কি বুঝি? আমাদের মানসিকতার নিচু স্তরটাতেও আমরা নেই, আমরা এখন পৌছে গেছি তারও নিচের অন্ধকারে।
আমি চুপচাপ ওনার কথা শুনছিলাম আর বুঝেছিলাম হয়ত আমার বিবেকের উত্তর,কালকের বিষয়টা ভাবছিলাম।তারপর চারিদিকের নির্জনতা কেটে গেল আর আমি ফিরে এলাম বাস্তব জগতে।সাকিব তার গল্প শেষ করতেই আব্দুল্লাহ বলল,সত্যি বললি?নাকি বানোয়াট?কালকের কি বিষয়?
সাকিব বলল:রাখালের গল্পটাত শুনেছিলি?
আব্দুল্লাহ বলল:হ্যা,তু?
বলল:আমি মানছি মানুষের মাঝে এমন অনেকেই আছে যারা হাত পা ভালো থাকতেও ভিক্ষা করে,কিন্তু কালকের পঙ্গু মানুষটাকে তুই নিজেত দিলি না টাকা, আর আমাকেও বারণ করলি,মনে পড়ে?
আব্দুল্লাহ: দূর ওরা পঙ্গু নাকি পরা এসব ভান ধরে,
সাকিব বলল:তাইত বললাম রাখালের গল্পটা পড়িস।
আব্দুল্লাহ বলল:সেই তখন থেকে রাখালের গল্প, রাখালের গল্প করছিস কেন?
সাকিব বলল:মিথ্যা মানুষকে বিপদে ফেলে,আর ঠিক সে রকম তুর নিয়ত ভালো, তুর ইচ্ছা, ও যেন টাকাটা নস্ট না করে ওর প্রয়োজনে কাজে লাগাক কিন্তু সে তা করল না,এটার বিচার আল্লাহ করবে,আর একজনের উপর ভিত্তি করে সবাইকে বিবেচনা করাটা বোকামো,এমন কাউকে সাহায্য করবি যে সাহায্যের যোগ্য।
আব্দুল্লাহ:আর কিছু?
সাকিব বলল:তুর আব্বা যাকাত দেয়?
আব্দুল্লাহ মাথা নেড়ে বলল:হ্যা।
সাকিব:যাকাত দেওয়া ছেড়ে দিতে বলিস,ওই যাকাতে কিছুই হবে না, লাভ নাই।
রেগে গেল আব্দল্লাহ।
সাকিব: কথা শুন,একটা করে শাড়ি বা লুঙ্গি দিয়ে কখনো যাকাত আদায় করলে সেটা হবে না, যাকাতটা এমনভাবে আদায় করতে হবে যাতে করে একজন বা দুজন নিজের জন্য কিছু করে খেতে পারে।
বলতে চাচ্ছি,ধর তুর আব্বা একটা অসহায় গরীবের সন্ধ্যান করল তারপর তার খোজ খবর নিল নিশ্চিত হল যে আসলেই খেটে খাওয়া মানুষ তবে কোনো অপারগতা তার আছেই সেক্ষেত্রে তাকে একটা দোকান কিনে দিল,বা একটা টেক্সি বা ড্রাইবিং শিখালো বা এমন একটা প্রশিক্ষনে টাকা দিয়ে ভর্তি করিয়ে দিল যার ফলে সে আয় করতে পারবে।অর্থাৎ যেহেতু এটা একটা হক, যাকাত হল গরীবের হক, ঘরে গিয়ে যাচায় করে তারপর দিতে হবে।
আব্দল্লাহর মুখ বন্ধ।এসব তার বাবাকে বললে তার বাবা জুতা পিটা করবে।
সব মানসিকতা,বুজুর্গ তাহলে ঠিকই বলেছেন।

মন্তব্যসমূহ