ভুল-ক্রুটি ও করণীয়
লেখক:আসিফ আহমেদ
ঘটনা-১
বিকেল বেলা রাকিব নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাচ্ছিল। হঠাৎই দেখলো অনিক মাঠে বসে কি যেন করছে। অনিক রাকিবকে দেখে ওর কাছে গেল।
তারপর দেখলো রাকিব কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ফোনে কি যেন দেখতেছে।
তারপর দেখলো রাকিব কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ফোনে কি যেন দেখতেছে।
--কিরে রাকিব, কি করিস বসে বসে?
অনিক রাকিবের কাধে হাত রেখে বলল।
অনিক রাকিবের কাধে হাত রেখে বলল।
-- এইতো দোস্ত ছবি দেখতেছি।
ইয়ারফোনটা খুলে রাকিব বলল।
ইয়ারফোনটা খুলে রাকিব বলল।
-- ছবি দেখছিস!
তুই রোজা রাখিস নাই?
অবাক হয়ে অনিক বলল।
তুই রোজা রাখিস নাই?
অবাক হয়ে অনিক বলল।
-- আরে রাখছি তো।(রাকিব)
-- তাহলে ছবি দেখতেছিস যে?
চল নামাজ পড়ে আসি। (অনিক)
চল নামাজ পড়ে আসি। (অনিক)
-- টাইম যে কাটেনা তাই ছবি দেখতেছি। (রাকিব)
-- চল নামাজ পড়ে আসি আগে। (অনিক)
-- আরে এখনো অনেক সময় আছে একটু বস তো। (রাকিব)
অনিক আমতা আমতা করতে করতে বসেই পড়লো। আর রাকিব একটা ইয়ারফোন অনিকের কানে গুজে দিল।
তারপর দুজনে ছবি দেখায় মগ্ন হয়ে গেল।
-- ছবিটা দারুণ তাইনা? আর নায়কা টাও কিন্তু জোশ। (রাকিব)
--হ্যা রে অনেক ভালো ছবিটা। (অনিক)
এভাবে অনিক আর রাকিব ছবি দেখায় মগ্ন হয়ে গেল। একটু একটু করে নামাজের সময় চলে গেল।
আর দু'জনে নামাজ পড়ার কথা একদম ভুলেই গেল।
ঘটনা-২
রাস্তার পাশেই বসেছিল আয়ান। একটু পরই আযান দিবে তারপর নামায পড়তে যাবে। হঠাৎই পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। আয়ান ফোনটা রিসিব করল।
তারপর,
তারপর,
আয়ান : হ্যা আম্মু বলো।
আয়ানের আম্মু :বাবুর জন্য কিছু খাবার নিয়ে আয় তো।
আয়ান :আচ্ছা আমি নিয়ে আসতেছি।
আয়ান দোকানে গিয়ে এক প্যাকেট চিপস, কলা আর কিছু বিস্কিট নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল।
বাড়ির কাছে এসেই আয়ান ওর হাতে থাকা একটা বিস্কিটে ভুল বশত কামড় বসিয়ে খেতে শুরু করলো। ঠিক তখনই আয়ানের মনে পড়ে গেল,
-এইরে আমি না রোজা রাখছি!
এখন তো রোজা ভেঙে গেল !
বাড়ির কাছে এসেই আয়ান ওর হাতে থাকা একটা বিস্কিটে ভুল বশত কামড় বসিয়ে খেতে শুরু করলো। ঠিক তখনই আয়ানের মনে পড়ে গেল,
-এইরে আমি না রোজা রাখছি!
এখন তো রোজা ভেঙে গেল !
আয়ান আবার ভাবে - আমিতো মনের ভুলে খেয়ে ফেলেছি, কিছুই হবেনা।
অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দের শেষে আয়ান আবার ভাবলো,
-ধ্যাত খেয়েই তো ফেলেছি এখন আর কি করবো রোজাটা ভেঙেই ফেলি।
-ধ্যাত খেয়েই তো ফেলেছি এখন আর কি করবো রোজাটা ভেঙেই ফেলি।
ভেবেই আয়ান পুরো বিস্কিটটা খেয়ে বাসায় চলে গেল।
একটু পর আবার বাইরে এসেছে ঠিক তখনই আরাফাতের সাথে দেখা।
আরাফাত : আস্সালামু আলাইকুম কেমন আছিস?
আয়ান : এইতো ভালো। আর তুই?
আরাফাত: আলহামদুলিল্লাহ। তা রোজা তো রাখছিস তাইনা আর নামাজে গেছিলি?
আয়ান ভাবে,
- এখন যদি বলি যে, আমি রোজা ভেঙে ফেলছি বা রাখি নাই আর নামাজেও যাইনি তো আরাফাতের কাছে নিজেকে ছোট করা হয়ে যাবে তাই বলল,
- এখন যদি বলি যে, আমি রোজা ভেঙে ফেলছি বা রাখি নাই আর নামাজেও যাইনি তো আরাফাতের কাছে নিজেকে ছোট করা হয়ে যাবে তাই বলল,
-- হ্যা হ্যা রোজা রাখছি তো আর এইতো নামাজ পড়েই আসলাম।
আরাফাত : আলহামদুলিল্লাহ। এভাবেই যেন পুরোটা মাস নামাজ, রোজা করতে পারিস।
আয়ান : হ্যা হ্যা অবশ্যই করবো এগুলো তো করতেই হবে।
আরাফাত: আচ্ছা দোস্ত তাহলে আমি আসি কেমন, আস্সালামু আলাইকুম।
আয়ান : আচ্ছা যা।
তারপর দুজনেই যে যার মতো চলে গেল।
ঘটনা-৩
ইফতারি প্রস্তুত। আর বিশ মিনিট পর আযান দিবে। এদিকে সাফিন আর ইমন ইফতারির সামনে বসে বসে গেমস খেলতেছে। তাদের দুজনের মনোযোগই মোবাইলের দিকে।
হঠাৎ আযানের ধ্বনি কানে যেতেই দুজনে তাড়াহুড়ো করে ইফতারি করতে শুরু করে, ইফতারি শেষে নামাজ না পড়েই দুজনে আবার মোবাইলটা নিয়ে ফেসবুকিং শুরু করে।
রাত ৮টা.......তারপর .....১০ টা বেজে যায়।
তারা দুজনে মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত ।
তারা দুজনে মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত ।
এদিকে যে এশার এবং তারাবীর নামাজের সময় চলে যাচ্ছে সেদিকে তাদের কোন খেয়ালই নেই।
রাত ১২ টার বেশি বাজে। ফোনের চার্জ প্রায় শেষ তাই দুজনে ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
ফজরের আজান হচ্ছে...... ধরফড় করে উঠে বসে দুজনেই..।
সাহরীর সময় চলে যাচ্ছে। দুজনে দ্রুত সাহরী খেয়ে ফজরের নামাজ না আদায় করেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
সাহরীর সময় চলে যাচ্ছে। দুজনে দ্রুত সাহরী খেয়ে ফজরের নামাজ না আদায় করেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘটনা-৪
অভ্র :জানিস তো স্বপ্নীল, কালকে রাহাত আমাকে ইফতারের দাওয়াত দিয়েছিল।
স্বপ্নীল: এটা তো ভালো কথা।
অভ্র :এহহহ ভালো কথা! কাউকে দাওয়াত দিলে যে ভালো কিছু খাওয়াতে হয় এটা কি ও জানেনা?
মাত্র তিন চারটা আইটেম করছিল, ধ্যাত (রেগে)
মাত্র তিন চারটা আইটেম করছিল, ধ্যাত (রেগে)
স্বপ্নীল : আরে আরে এতে রাগ করার কি আছে?
আর রাসূল (সাঃ) তো বলছেন যে, যে ব্যক্তি একটা খেজুর দিয়ে হলেও কাউকে ইফতার করালো সে যেন পূর্ণ সাওয়াব পেল।
আর রাসূল (সাঃ) তো বলছেন যে, যে ব্যক্তি একটা খেজুর দিয়ে হলেও কাউকে ইফতার করালো সে যেন পূর্ণ সাওয়াব পেল।
অভ্র: এসব আলেমী কথা রাখ তো।
আর জানিস ঐ ইমন ব্যেটা আরে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইমন, খুব খারাপ বুঝলি তো শুধু*****
আর জানিস ঐ ইমন ব্যেটা আরে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইমন, খুব খারাপ বুঝলি তো শুধু*****
স্বপ্নীল :আরে তুই তো রোজা রেখে গীবত করতেছিস !তুই জানিসনা এমনিতেই তো গীবত করা খারাপ
তার উপর রোজা রেখে করা তো একদমই ঠিক না (অভ্রকে থামিয়ে বলল)
তার উপর রোজা রেখে করা তো একদমই ঠিক না (অভ্রকে থামিয়ে বলল)
অভ্র :ঐ স্বপ্নীল, কি ভালো কি খারাপ এটা তুই আমারে কেন বলতেছিস? বলেই অভ্র স্বপ্নীলের গায়ে হাত তুলতে বসলো।
স্বপ্নীল :আরে আরে কি করিস!
আমি রোজা রাখছি মারামারি করিসনা প্লিইইইইইজ।
আমি রোজা রাখছি মারামারি করিসনা প্লিইইইইইজ।
ঘটনা-৫
রাজু আর তমাল শপিং করে রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলছে,
তমাল: অনেক দেরি হয়ে গেছে তুই এখন বাসায় গিয়ে কিভাবে ইফতার করবি?
তাই আজ তুই আমাদের বাসাতে যাবি দুজনে একসাথে ইফতার করবো।
তাই আজ তুই আমাদের বাসাতে যাবি দুজনে একসাথে ইফতার করবো।
রাজু: ঠিক আছে চল।
এরপর রাজু আর তমাল দুজনে মিলে দোকান থেকে ইফতারের সবকিছু কিনে রিক্সাতে ওঠে।
আর মাত্র ১৫ মিনিট আছে তাই মাগরিবের আযান দিবে। এদিকে তমাল আর রাজু এখনো বাড়ি পৌছায়নি।
রাজু: চাচা একটু তাড়াতাড়ি যাও না ইফতারির সময় তো হয়ে যাচ্ছে।
রিকসাওয়ালা :হ বাপজান যাইতাছি।
আজানের ধ্বনি দেয়ার সাথে সাথেই রিক্সাটা এসে তমালদের বাসার সামনে থামল। তমাল ভাড়াটা দিয়ে তাড়াতাড়ি দুজনে মিলে বাসার ভিতরে যাবে ঠিক তখনই রাজু এক দৌড়ে আবার রিকসাওয়ালা কাছে চলে যায়। তমালও পিছুপিছু চলে আসে।
রাজু: চাচা আপনিও তো মনে হয় রোজা রাখছেন তাইনা?
রিকসাওয়ালা: হ বাজান আছিলাম তো।
রাজু: চাচ আপনি রোজা আছেন আর এখন তো ইফতারি অন্য জায়গায় গিয়ে করতেও পারবেন না অনেক দেরি হবে।
তমাল:তারচেয়ে চাচা আসুন না আজ আমাদের সাথেই ইফতারটা করে নিন।
রাজু: হ্যা হ্যা। চাচাজান আজ আমাদের সাথেই ইফতার করুন।
অতঃপর তমাল আর রাজু রিক্সাওয়ালাকে বাসায় নিয়ে গিয়ে একসাথে ইফতার সেরে নিল।
কিছু কথা: রমজান মাসে আমরা বুঝে না বুঝে জেনে না জেনে এরকম অনেক কাজ করে থাকি।যেগুলো করণীয় সেগুলো অবশ্যই করতে হবে এবং যেগুলো বর্জনীয় সেগুলো ত্যাগ করতে হবে।
রমজান আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। তাই এ মাসে আমরা যেন এমন কোন ভুলক্রুটি না করি, যার কারণে আমাদের রোযা নষ্ট হয়ে যায় বা মাকরুহ হয় ।
রমজান আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। তাই এ মাসে আমরা যেন এমন কোন ভুলক্রুটি না করি, যার কারণে আমাদের রোযা নষ্ট হয়ে যায় বা মাকরুহ হয় ।
আল্লাহ আমাদের সবাই কে যেন পূর্ণ মাস সহীহ্ ভাবে রোযা রাখার তৌফিক দান করেন, আমিন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন