সাজব রমজান গল্প প্রতিযোগীতা -২

সাজব রমজান গল্প প্রতিযোগীতা -২
গল্প--ইফতার
লেখা--নাহিয়া রেজওয়ান ইতি




""ট্রেনটা বিকট শব্দে হুইসেল তুলে মাত্র চলে গেলো।ট্রেনের শব্দে সালেহা টের পেলো সেহেরীর সময় হয়ে গেছে।।ঘরে কোন ঘড়ি না থাকায় এটাই এক মাত্র উপায় তাদের সময় বোঝার।রাত ৩টায় রাজশাহী গামী ট্রেনটা তাদের বস্তির লাইন দিয়ে যায়।সালেহা বেগমের স্বামী করিম আর ২ ছেলে মেয়ের সংসার।সালেহা স্বামী আর বাচ্চাদের উঠায় সেহেরী খেলো।আজ প্রথম তার বাচ্চা গুলা রোজা থাকবে। এতে ছেলেমেয়ে দুটার যেন আনন্দ আর ধরে না।আবির এর বয়স ৭ আর অরনীর ৫ বছর।ফজরের নামাজ পড়ে সালেহা কাজে যাবার জন্য স্বামীকে বলে বের হবার সময় মেয়েটা গলা জরিয়ে ধরে বলে, মা কাল মসজিদে হুজুর বলেছে আমাদের নবীজী নাকি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন,তুমি আসার সময় আমার জন্য খেজুর আনবা? মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলে আচ্ছা নিয়ে আসবো।।সালেহা কাজে বের হবার পড়ে করিমের দু চোখ ভিজে ওঠে।এই তো গত বছরও কত সুন্দর ছিলো ওদের সংসার ।তখন করিম রিকশা চালাতো আর সালেহা বাড়িতে থাকতো।কত ইফতার নিয়ে সে ঘরে ফিরতো তখন ছেলে মেয়ে ২টা তেমন কিছু বুঝতো না।।তথচ আজ ইচ্ছা থাকলেও কিছু করার ক্ষমতা করিমের নাই।কারন আজ সে পঙ্গু।রিকশা চালাতে যেয়ে ট্রাকের তলে পা দুইটা চলে যায় তার পড় থেকেই বিছানায়।আর সংসার চালাতে সালেহাকে চৌধুরী বাড়িতে কাজ নিতে হয়।সালেহা আজ তাড়াতাড়ি সব কাজ সেরে ফেলে, যাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারে কিন্তু বিকাল হতেই চৌধুরী বাড়ি মেহমানে ভরে ওঠে।একা হাতে নানা রকম ইফতারী তৈরী করে সে। বিকাল গড়িয়ে ইফতারের সময় হয়ে আসে, সালেহা হাতের সকল কাজ সেরে চৌধরী গিন্নীর কাছে ছুটি চায়,,কিন্তু চৌধুরী গিন্নী ছুটি না দিয়ে বলে এত মানুষ তাদের কে পরিবেশন করে খাওয়াবে, তার চেয়ে যেন সালেহা থেকে যায় আর ইফতারের পরে থেকে যাওয়া ইফতার গুলো নিয়ে সে বাড়ি যায়।।এদিকে করিম মিয়া আবির আর অরনীকে নিয়ে সালেহার অপেক্ষায় বসে আছে।অরনী তো খুব খুশি মা খেজুর আনবে।ছেলে মেয়ে ২টা সামনে খালি প্লেট আর জগ ভর্তি পানি নিয়ে বসে আছে।অপেক্ষা করতে করতে আজান হয়ে যায় সালেহা আসে না।বাচ্চা ২টা মুখ খানা শুকিয়ে যায় ওরা পানি দিয়ে ইফতার করে।করিম মুখে পানি দিয়ে চোঁখের পানি ছেড়ে দেয়।কিন্তু বাচ্চাদের বুঝতে দেয় না।এদিকে আজান হওয়ার সাথে সাথে একটু পানি দিয়ে রোজা খুলে সালেহা মেহমানদের খাবার খেতে দেয়।।মেহমানের খাওয়া শেষে তাড়াতাড়ি হাতের কাজ সেরে খাবার গোছাবার জন্য যেয়ে দেখে কোন খাবার বেঁচে নেই।সালেহা বেগম দু চোঁখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত তোলে।এদিকে করিম বাচ্চারা খুদায় ছটফট করতে থাকে।সালেহা বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় কিন্তু বুকে চেঁপে চাপা কষ্ট কি ভাবে স্বামী সন্তানের সামনে সে খালি হাতে দাড়াবে।বাড়ির সামনে একটা মুদির দোকান থেকে কিছু চাল আর আলু নিয়ে ঘরে যায় সালেহা, ঘরে যেয়ে দেখে স্বামী সন্তান খুদার জ্বালায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।রান্না শেষে সবাইকে নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে আর একটা দিনের অপেক্ষায় শুয়ে পড়ে সালেহার পরিবার। যে দিনটাতে আবারও তাদের জীবন যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।।।
"""আমাদের সমাজে এমন অনেক সালেহার পরিবার আছে। যারা দুচোখ ভরে অনেক স্বপ্ন দেখে কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারে না।আমরা যদি এই সব অসহায় মানুষদের দিকে আমাদের হাতটা একটু বাড়িয়ে দেই তবে ওদের রোজার দিন গুলো ও হয়ত একটু ভালো ভাবে কাটবে।আসুন না আমরা দামী রেস্টুরেন্টে খেয়ে সেলফি পোষ্ট না করে এদের মতো করিম, সালেহা, আবির আর অরনীর পাশে একটু দাড়াই।।।হয়তো আমাদের খুব বেশি ক্ষতি তাতে হবে না।
সকলকে মাহে রমজানের মোবারকবাদ।।

মন্তব্যসমূহ