দ‍্য লস্ট লেডি - bangla story

★দ‍্য লস্ট লেডি★★

লেখক:নীলাদ্রি মুখার্জী [ kolkata ]









.……………


পেরুর আমাজোনাস অঞ্চলের একটি ছোট্ট শহর,বাগুয়া গ্রান্দে। বিশ্ব মানচিত্রে এই জায়গাটির পরিচয় যদিও উটকুবাম্বা প্রদেশের রাজধানী হিসেবে কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দাতে বিধ্বস্ত বাগুয়া গ্রান্দের বাসিন্দারা তাদের বাসস্থানকে একটি ধুঁকতে থাকা গ্রামের বাইরে আর কিছু ভাবতে পারেননা। তবে বাগুয়া গ্রান্দের এই দুর্ভাগ্য কিন্তু চিরকালের নয়,বরং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কফি রফতানি করে অর্থনৈতিক ভাবে বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছিল এই শহরটা। কিন্তু খানিকটা হঠাৎ করেই পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিক থেকে বাগুয়া গ্রান্দের ভাগ‍্য পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়,এবং কাকতলীয় ভাবে তার কিছুদিন আগে থেকেই শহরের দক্ষিণ প্রান্তে এসে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছিল স্পেনের সালামাঙ্কা থেকে আসা একটা প্রত্নতাত্ত্বিক দল। এখনকার অধিবাসীদের মতে ওই দলটির অযাচিত কার্যকলাপের ফলশ্রুতিতে বাগুয়া গ্রান্দের দুর্ভোগের সুচনা। এমনটা নয় যে তৎকালীন বাসিন্দারা খননকার্য বন্ধ করার জন‍্য প্রতিরোধ সংগঠিত করেননি;কিন্তু পুরোটাই বিফলে গেছে দোনলা বন্দুক আর অপরিসীম লোভের সাথে অসম লড়াইয়ে। আর এতো যে সে লোভ নয়,এ লোভের ভিত ইজিপ্সিয়ান সভ‍্যতার থেকেও এক হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাসে গাঁথা।মানবদেহের মৃত্যু পরবর্তী সংরক্ষণের ইতিহাসের অংশীদার হওয়ার লোভ উপেক্ষা করা আর যাই হোক মোরাতার দলের ধাতে সইত না। যদিও খননকার্যে সফল হয়েও শেষ পর্যন্ত মোরাতার দল পেরুর অভ‍্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারনে 'দ‍্য লস্ট লেডি'কে সাথে নিয়ে সালামাঙ্কা পাড়ি দিতে পারেনি,তবুও বাগুয়া গ্রান্দের বাসিন্দাদের ক্ষতে প্রলেপ পড়েনি এতটুকুও। ক্ষোভ প্রশমনের কোন উপায়ও ছিল না, কেননা 'দ‍্য লস্ট লেডি' এর ভূমিপৃষ্ঠে পুনরার্বিভাবের ঠিক পর থেকেই মার্কিনি কফি কোম্পানিগুলোর অযাচিত ব‍্যবসায়িক আগ্রাসনের শিকার হয় বাগুয়া গ্রান্দের অর্থনৈতিক ব‍্যবস্থা। তাতে বাসিন্দাদের স্বচ্ছল জীবন যাত্রাতে ছেদ পড়ে এবং কফি শ্রমিকদের অবস্থা হয় মনুষ‍্যেতর। এর প্রতিকার কিছু করে উঠতে না পারলেও বহু বছর ধরেই ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে চলছিল বাগুয়া গ্রান্দের ইনকাদের বুকে।

এই সময়টাতে পেরুর গ্রীষ্মপ্রধান বাগুয়া-গ্রান্দেতে টানা এক মাস রোজ সন্ধ্যা বেলা বৃষ্টি নামে। স্প‍্যানিশরা না মানলেও স্থানীয় ইনকাদের বিশ্বাস ,তাদের দেবতা 'কোনে', জমি সুফলা করার জন্য প্রতি বছর এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। শহরের দক্ষিণ কোণে অবস্থিত ইনকাদের জনবসতি,যেখানে আসলে মনে হবে যে বিশ্বায়নের যুগের কোন ছাপ এখানকার জীবন যাত্রায় অন্তত পড়েনি । স্থানীয় স্প‍্যানিশ অধিবাসীরা ব‍্যঙ্গ করে এই অঞ্চলটাকে 'দ‍্য ওল্ড লায়নস ডেন', সংক্ষেপে 'টোল্ড' বলে ডাকে। এই টোল্ডেরই এক প্রান্তে হুয়ানদের পৈতৃক সরাইখানা। আজ যদিও তুমুল বৃষ্টির জন‍্য জনসমাগম হয়নি সেখানে কিন্তু গত এক বছরের প্রতিটি সন্ধ্যার মতই আজও এসেছে হুয়ানের দুই বন্ধু সালগাদো আর ভেরন। সালগাদোর একটা ছোট কফির ফার্ম আছে আর ভেরন কিছুদিন জল প‍্যাকিং কারখানায় কাজ করার পর মাস দুয়েক আগে বাগুয়া-গ্রান্দে মিউসিয়ামে সিকিউরিটির কাজ নিয়েছে।সরাইখানার নিভু নিভু আলোতে বার কাউন্টারের সামনের দুটো চেয়ারে বসে চাপা স্বরে কিছু আলোচনা করছিল ভেরনরা। নিজের জন‍্য একটা মাগে বিয়ার ঢেলেদুটো পিস্কো ভরা গ্লাস এনে ওদের সামনে রাখল হুয়ান।গলাখাঁকড়ানি দিয়ে বলল

-'কি হে ভেরন,তুমি নাকি আজ দারুণ খবর এনেছো  !! কি সালগাদো, তাই তো ??'

সালগাদো হুয়ানের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে আবার নিজের পিস্কোতে মনোনিবেশ করল।

-'হ‍্যাঁ, ভাল খবর তো বটেই। আজ রাতে আমাদের গত এক বছরের সমস্ত পরিকল্পনা সার্থক হতে চলেছে।' 

হুয়ানের সর্বাঙ্গে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। উত্তেজনা চাপতে না পেরে কাউন্টারের ওপর একটা জোরে চাপড় মেরে, বিস্ফারিত চোখে ভেরনের দিকে তাকিয়ে বলল

-'কি বলছ ভেরন!!এই অসম্ভবকে কিভাবে সম্ভব করলে তুমি ?'

এতক্ষণ গুটিসুটি মেরে বসে থাকা ভেরন,গা ঝাড়া দিয়ে বসল। পকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরিয়ে, রিং বানাতে বানাতে বলল

-'শোনো হে হুয়ান,আমি গরীব হতে পারি কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা আমারও রয়েছে।'

-'আহ্!আজেবাজে না বকে আসল কথায় এসো। আমাদের হাতে কিন্তু আর বেশি সময় নেই।' পেগটা এক নিঃশ্বাসে শেষ করে  বিরক্তির সুরে বলল সালগাদো।ধমক খেয়ে চারপাশটা দেখে নিয়ে, হু‌য়ানদের দিকে মুখটা খানিকটা ঝুঁকিয়ে শুরু করল ভেরন

-'আজ আমার মিউসিয়ামে ডিউটি ছিল 'দ‍্য লস্ট লেডি' এর ঘরে। আজকে সকাল থেকেই, মিউসিয়ামে যে তিনজন পেরু সেনাবাহিনীর জওয়ান থাকে,তাদেরকে হঠাৎই  লিমাতে সরানো হয়েছে কোনো এক জরুরি কাজে। কাজেই  আজ লেডির সুরক্ষার দায়িত্বে ছিলাম আমি একাই। 

তখন প্রায় লাঞ্চ টাইম, দর্শকদের সংখ‍্যা আহামরি কিছু নয়।এমন সময় ঝড়ের গতিতে এক মেক্সিকান ভদ্রলোক এসে ঢুকলেন লেডির ঘরে।তবে তিনি একা ঢুকলেন বললে ভুল বলা হবে কেননা তার সাথে ছিল দুই দীর্ঘদেহী কৃষ্ণাঙ্গ বডিগার্ড।

ঘরে ঢুকেই তিনি এমনভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লেডিকে দেখতে লাগল যেন জীবনে প্রথমবারের জন্য কোন মমি দেখছে!!  সামান্য কিছুক্ষণ পরেই যেরম ঝড়ের গতিতে ঢুকেছিল ঠিক একই ভাবে হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল লোকটা।'

-'বেরিয়ে গেল মানে!! তুমি কথা বলার চেষ্টা করলে না ওর সঙ্গে?? ' 

একটু করুণার চোখে হুয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করল ভেরন

-'লোকটা বেরিয়ে যেতেই ,আমি লাঞ্চ ব্রেকের নাম করে মিউসিয়ামের থেকে বেরিয়ে পড়ি আর পিছু নেই লোকটার। অলিগলি পেরিয়ে লোকটা আর ওর বডিগার্ডগুলো গিয়ে হাজির হয় স্প‍্যানিশ পট্টিতে। আর তারপর হঠাৎই  দুম করে সেঁধিয়ে যায় একটা শুঁড়িখানার ভিতরে।

প্রথমে ঢুকতে ইতস্তত করলেও আমাদের পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে,আমি ঢুকে পড়ি শুঁড়িখানাটাতে আর সটান হাজির হই লোকটার টেবিলে।

প্রথমে আমি একটু আমতা আমতা করলেও লোকটাই আচমকা আমাকে জিজ্ঞাসা করে বসল যে আমি 'দ‍্য লস্ট লেডি' কে আজ রাতে ওনার কাছে এনে দিতে পারব কিনা!! বিনিময়ে পঞ্চাশ হাজার সোল দেবে বলল। আমি সাত পাঁচ না ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।' 

কথা শেষ করে মাথা নিচু করে গুম হয়ে বসে রইল ভেরন। বাইরে বৃষ্টির আওয়াজ ততক্ষণে অনেকটাই কমে এসেছে,ওদের চাঙ্গা করার জন‍্য পিস্কোর বোতলটা এনে গ্লাস দুটো ভর্তি করে দিল হুয়ান। নিস্তব্ধতা গ্রাস করছিল পুরো সরাইখানাটাতে,এমন সময় অমোঘ প্রশ্নটা করল সালগাদো

-'আচ্ছা,আমাদের না হয় লেডিকে বিদায় করে বাগুয়া-গ্রান্দেকে অর্থনৈতিক মন্দার থেকে অভিশাপমুক্ত করার ঠেকা আছে,কিন্তু ঐ মেক্সিকানটার লেডির ব‍্যাপারে এত উৎসাহ কেন? পৃথিবীতে সব দেশের মিউসিয়াম মিলিয়ে প্রায় শ-তিনেক মমি আছে। তা সে সব ছেড়ে বাগুয়া-গ্রান্দেতে কেন?' 

সালগাদোর প্রশ্নটা একেবারেই ফেলে দেওয়ার মত নয়। হুয়ান একটু মুচকি হেসে সালগাদোর দিকে তাকিয়ে বলল

-'আছে,আগ্রহের কারণ আছে। সালগাদো ,তুমি হয়তো জানোনা,পেরুভিয়ান মমিরা হল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। ইজিপ্সিয়ান মমিদের থেকেও ১০০০ বছরের বেশী পুরোনো আমাদের পূর্বপুরুষদের দেহ সংরক্ষণের প্রথা। আর লেডির এমন একটা বৈশিষ্ট্য আছে যেটা পৃথিবীর আর কোন মমির নেই এবং আমার বিশ্বাস সেটা খুব কম লোকই জানে।'

-'কি সেই বৈশিষ্ট্য?'

-'লেডির হাতের আঙ্গুলের গঠনটা ভারী অদ্ভুত। আমাদের এক একটা হাতে যেরকম পাঁচটা আঙ্গুল, লেডির তা নয়। লেডির এক এক হাতে তিনটে করে আঙ্গুল আর গঠনটাও এমনই যে পরিস্কার বোঝা যায় যে আঙ্গুলগুলো ,না কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে, না দুর্ঘটনায় বাদ পড়েছে।'

-'মানেটা কি? মানুষের আবার এরকম হয় নাকি?' বড় বড় চোখ করে বলল সালগাদো। এবার হাসি মিলিয়ে গিয়ে মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল হুয়ানের,শান্ত গলায় সে বলল

-'লেডি মানুষ নয়। মানুষ হলে তার উপস্থিতির দোষে আমাদের শহরের এই হাল হত না। তোমরা তো জানোই যে লেডিকে খুঁড়ে বার করার পর থেকে আমাদের একসময়কার স্বচ্ছল শহরের কি দশা হয়েছে !আর মানুষের মমি নয় বলেই মেক্সিকানটা ওটার জন‍্য আন্তর্জাতিক চোরাবাজারে এর প্রচুর দাম পাবে। ' 

হুয়ান কথা শেষ করে একদৃষ্টিতে কাউন্টারের ওপর রাখা বিয়ারের মাগগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করল হুয়ানদেরকে। বাইরে বৃষ্টি সম্পূর্ণ থেমে গেলেও,ওদের মনে যে আশঙ্কার কালো ঝড় উঠেছে তার থামার কোন লক্ষণ নেই। সবার মনে তখন একটাই প্রশ্ন,বাগুয়া-গ্রান্দেকে অভিশাপ মুক্ত করতে গিয়ে আবার 'দ‍্য লস্ট লেডি'-র অভিশাপ তাদের ওপর এসে পড়বে নাতো !! 

খানিকপরে মুখ খুলল হুয়ানই,বলল

-'শোনো বন্ধুরা, এরকম সুযোগ ভবিষ্যতে আমাদের কাছে আর আসবে কিনা জানা নেই, কেননা লেডির অভিশাপের ভয়ে কেউই তাকে বাগুয়া-গ্রান্দের বাইরে নিয়ে যেতে সাহস পায়নি এমনকি পেরুভিয়ান সরকারও না।এই মেক্সিকানটা যখন নিজে থেকে রাজি হয়েছে তখন আমাদেরকে যেকরে হোক লেডিকে মেক্সিকানটার হাতে তুলে দিতেই হবে। 

তবে লেডির অভিশাপ থেকে বাঁচতে, আমরা লেডিকে শহরের বাইরে নিয়ে যাবো না। আর একাজের জন্য কোন টাকা আমাদের লাগবে না,কেননা একাজ আমরা করছি বাগুয়া-গ্রান্দেকে  অভিশাপ মুক্ত করতে। লেডিকে মিউসিয়াম থেকে বার করে আমরা টোল্ডে আনবো আর ভেরন তুমি ওই লোকটাকে বলে দাও রাত তিনটেয় টোল্ডে এসে লেডিকে নিয়ে যেতে। '

টাকার ব‍্যাপারে হুয়ানের কথাটা যে বাকিদের খুব মনে ধরল এমনটা নয়।তবে লেডির অভিশাপের ভয়ে হোক বা অন‍্য কিছু ভেবে তারা হুয়ানের প্রস্তাবে নিমরাজি হয়ে গেল। মেক্সিকানটাকে ফোন করে দিয়ে হুয়ানের ভ‍্যানটা নিয়ে ওরা তিনজন বেরিয়ে পড়ল মিউসিয়ামের উদ্দেশ্যে‌।

অন‍্যদিনের তুলনায় আজ খানিকটা বেলা করেই ঘুম ভাঙলো হুয়ানের,গতকাল অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছে সে। মিউসিয়ামে পেরুভিয়ান আর্মি না থাকাতে লেডিকে হাতাতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি ওদের। কথামতো ভ‍্যানে করে লেডিকে নিয়ে  টোল্ডেই গিয়েই অপেক্ষা করছিল ওরা,মেক্সিকান আর তার দুই শাগরেদ সময়মতোই চলে আসে সেখানে। হুয়ান আগেই বলে রেখেছিল যে সে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও, ঐ লোকগুলোর সাথে কথা বলবে না ,কাজেই লেডিকে হস্তান্তরের কাজটা সালগাদোরাই সারে। সালগাদোর কাছেই হুয়ান শুনেছে যে লোকটা টোল্ড থেকে তার মাজদা ভ‍্যানে করে লেডিকে নিয়ে যাবে শহর থেকে দুশো কিলোমিটার দূরে জাহাজঘাটিতে। 

বিছানা থেকে উঠে নিজের জন‍্য এক কাপ কফি বানিয়ে লনে এসে দাঁড়ায় হুয়ান। কালকে রাতের দুর্যোগ কেটে গিয়ে আকাশ পরিস্কার হয়ে ফটফটে রোদ উঠেছে বাগুয়া-গ্রান্দেতে। বুক ভরে শ্বাস নিল।হুয়ান, প্রকৃতিও যেনো শহরের প্রতিটি অধিবাসীকে শাপমোচনের অভিনন্দন জানাচ্ছে। কফিটা শেষ করে ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিল হুয়ান, এমন সময় লনের গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকল সালগাদো। সালগাদোকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে কুশল বিনিময় করতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল হুয়ান। কয়েক ঘন্টার ব‍্যবধানে একি চোখমুখের অবস্থা হয়েছে সালগাদোর!! তার মুখটা কোন এক অজানা আতঙ্কে এতটাই ফ‍্যাকাশে হয়ে গেছে যে মনে হচ্ছে কেউ যেন তার রক্ত শুষে নিয়েছে। উস্কোখুস্কো চুলের সাথে তার ঠিকরে বেরিয়ে আসা চোখ,সালগাদোকে এক বদ্ধ উন্মাদের রূপ দিয়েছে। হুয়ান সালগাদোর দুকাঁধে হাত রেখে অবাক হয়ে বলল

-'সালগাদো !! তোমার চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন? কি হয়েছে?'

মৃত মানুষের মতো ঘোলোটে দৃষ্টিতে হুয়ানের দিকে তাকালো সালগাদো। তার চোখে বিস্ময়মিশ্রিত অবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। মুখে শুধু বলল

-'তুমি সকালের নিউস দেখোনি!!'

রোজ সকালে কফির সাথে নিউস দেখা হুয়ানের পুরোনো অভ‍্যাস কিন্তু আজ সে সকাল থেকে টিভি চালায়নি। মাথা নেড়ে না বলাতে হুয়ানকে একপ্রকার টানতে টানতে তাদের ড্রয়িংরুমে নিয়ে এল সালগাদো। রিমোট দিয়ে টিভি চালিয়ে নিউস চ‍্যানেলগুলো পাল্টে পাল্টে দেখতে লাগল পাগলের মতো,সালগাদো যেন কিছু খুঁজছে!!  শেষমেশ একটা চ‍্যানেলে এসে থামল সে,চোখের ইশারায় হুয়ানকে দেখতে বলে ধপ করে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পড়ল সালগাদো। টিভিতে নিউস অ্যঙ্কর তখন বলে চলেছে

"কাল ভোর চারটের সময় উটকুবাম্বা প্রদেশের রাজধানী বাগুয়া-গ্রান্দের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একটি মাজদা ভ‍্যানকে রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ভ‍্যানটি সম্ভবতঃ কোন যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে দুর্ঘটনাস্থলে কোন আরোহী বা চালকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার থেকেও অদ্ভুত ব‍্যাপার যে ভ‍্যানটি থেকে লোকাল পুলিশ চারটে পেরুভিয়ান মমি উদ্ধার করেছে ,যেখান থেকে তারা অনুমান করছে যে কোন চোরাচালানকারী দল মমিগুলো নিয়ে পাচার করার সময় কোন এক কারণে সেগুলো সুদ্ধ ভ‍্যান রেখে পালায়। মমি চুরির এই ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের মাথাব‍্যথার কারণ হলেও,শহরের মেয়র এর্নেস্তো ভাসকুয়েজ জানিয়েছেন যে হাই প্রোফাইল মমি 'দ‍্য লস্ট লেডি' অক্ষত অবস্থাতে মিউসিয়ামেই আছে এবং আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা তা স্বচক্ষে যাচাই করে এসেছেন।মমিগুলিকে...."

টিভিটা বন্ধ করে সালগাদোর পাশে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হুয়ানও বসে পড়ল,দুহাতে মুখ ঢেকে কোনরকমে শুধু জিজ্ঞেস করল

-'মমি তো মেক্সিকান আর দুই শাগরেদদের থাকার কথা ,চতুর্থ মমিটা তাহলে কার?'

-'আমি ভেরনকে টাকা নিতে অনেকবার বারন করেছিলাম হুয়ান,কিন্তু সে শেষপর্যন্ত শোনেনি.....।'

মন্তব্যসমূহ