story name - স্বপ্ন কুটির। writer name - সুলতানা। with - কলমবাজ



 story name -     স্বপ্ন কুটির



 writer -   সুলতানা




এই পথ, পথের ধারে কাশবন,,
সব কিছু আমার খুব পরিচিত।
কিন্তু আজ যেন সবই অপরিচিত মনে হচ্ছে!!
আমার বাড়ির আংঙ্গিনা ছুয়েই এই পথের শুরু।।
বাবার হাত ধরেই এই পথে প্রথম পা ফেলি আমি একপা দু পা করে হাটতে হাটতে পরিচিত হয়েছিলাম এখানকার সবুজ শ্যামলা মায়াভরা প্রকৃতির সাথে।
এই তো সামনের এই বিলে কত শত বার স্নান করেছি বাবার সাথে। ডুবে যাবো জেনেও লাফ দিতাম কারণ আমার ভরসা ছিল ডুবে যাওয়ার আগেই বাবা আমাকে তুলে নিবে।
বাবার কথা ভাবতেই চোখ দু,,টা ছলছল করছে,ভিতর টা যেনো হাহাকার করে উঠছে।
হাটতে হাটতে চলে এলাম আমাদের বাজারে।
যেখানে ১ম দোকান টাই করিম চাচার চা, নাস্তার দোকান।
দোকানে গিয়ে বসলাম।
অনেক দিন আগের দোকান সব কিছুই পোড়নো হয়ে গেছে কিন্তু বাবার সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো চোখে বেসে উঠছে একদম নতুনের মত।
এই ব্যাঞ্চেতেই বাবা আমাকে রোজ সকালে বসিয়ে নিজ হাতে নাস্তা খাইয়ে দিতেন।
তারপর বাবা আমাকে স্কুলে দিয়ে সারা দিন ব্যান চালাতো।
নাহ,,আর কিছুই ভাবতে পারছিনা,,হঠাৎ করিম চাচা বল্ল,কি লাগবে বাবা।
না চাচা কিছু লাগবেনা।
চলে আসলাম বাড়িতে।

দরজায় নক করতেই ছোটে আসলো (আমার ছেলে) রাজ।
বাবা বাবা বলে হাত দু,টা বাড়িয়ে দিল কোলে নিতে,কিন্তু আমি আর পারলাম না প্রতিদিন এর মত আজ ওকে কোলে নিতে,
আমি রুমে চলে গেলাম।
সাথে সাথে সুলতানা নাস্তা নিয়ে আসলো,,
কই ছিলে সকাল থেকে?
কটা বাজে খেয়াল আছে??
আমি কিছুই বল্লাম না চুপ করে রইলাম।
কি হল কিছু বলছ না কেন??
ওকে এসব পরে শুনবো, এখন ফ্রেশ হয়ে এসো নাস্তা করবো।
আমি কিছু না বলে আবার বাহিরের দিকে পা বাড়ালাম।

আবার কোথায় যাচ্ছো??
আমার পথ আগলে দাড়ালো সুলতানা।
নাস্তা করে যেথায় ইচ্ছে যাও।

তোমরা করে নাও!

মানে?? তুমি করবেনা?
দেখ ছেলেটাও তোমার জন্য আধ বেলা হয়ে গেছে এখনো কিছু খায়নি,,আগে রাজ কে খাইয়ে দিয়ে তারপর বের হও।

বাবা কে নিয়ে এসে খাবো।
আবার সেই বুড়ো কে........
ওকে তুমি ওই বুড়োকে নিয়েই থাকো আমি চ.....
কথা শেষ না হতেই সুলতানা র গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম,,
সুলতানা তোমার ছেলে না খেয়েছে বলে তোমার খুব জ্বলছে?
আমাকেও আমার বাবা ঠিক ওর মতো করেই বড় করেছে।
সুলতানা,তুমি জানো আজ যেই লোকটাকে তুমি বুড়ো বলছো সেই আমার মা মারা যাবার পর আমার সুখের জন্য তার যৌবন কে ত্যাগ করে একাকী জীবন কাটিয়েছেন।

তুমি হয়তো জানোনা, আমার বাবা সামান্য ভ্যান ড্রাইভার ছিলেন।দিনের পর দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জীবনের সাথে যুদ্ধ করেছেন শুধু আমাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
আজ যে স্বামী কে নিয়ে তোমার এতো অহংকার তার পিছনে সব টুকু অবদান অই বুড়ো টার।

সুলতানা,, আমার বাবার খর কোটার ছোট্ট একটা ঘর ছিল,,সেই ঘরে আমি বাবার কোলে মাথা রেখে পরম শান্তিতে গল্প শুনতাম।
বাবা বলতো একদিন আমি অনেক বড় মানুষ হবো।
আমাকে সুন্দর একটা লক্ষি মেয়ে দেখে বিয়ে করাবে তারপর আমাদের সংসার জুড়ে আসবে নতুন অতীথি।যাকে নিয়ে বাবা বৃদ্ধা বয়সে হেসে খেলে সময় কাটাবে!!

আজ বাবার সব স্বপ্ন পুরুণ হয়েছে,,,
বাড়ি গাড়ী, তোমার মত কোটিপতি বাবার মেয়ে আমার বউ,আমাদের কোল জূড়ে বাবার স্বপ্নের সেই দাদুভাই,,
আর আমার বাবার স্থান"""বৃদ্ধাশ্রম """"

না না,এ কিছুতেই হয়না,
তুমি থাকো না হয় চলে যাও।
পৃথিবী ছাড়তে পারবো তবুও আমার বাবাকে ছাড়তে পারবো না।
আমি গেলাম বাবাকে তার "স্বপ্ন কুটিরে" ফিরিয়ে আনতে।

মন্তব্যসমূহ