bangla new story নীলনয়নী - writer - মাহাদী_জিদান,,, with - কলমবাজ



আজ মামার হাসপাতাল থেকে রিলিজের দিন।বেশ কয়েকদিন আগে উনার বুকে ব্যাথা উঠে। তাই ডাক্তার দেখানোর জন্য শহরে আসেন এবং ডাক্তারের পরামর্শেই উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।এখন উনি মোটামুটি সুস্থ।তাই ডাক্তার এক সপ্তাহের বেড রেস্ট ও কিছু ঔষধপত্র বিধান করে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেন।মামার সাথে মামি, খালামনিরাও ছিলেন হাসপাতালে উনার দেখাশুনা করার জন্য।আমার মা কাল এসে দেখে গিয়েছিলেন একবার।আজ আর আসতে পারে নি আমার আর বোনের পড়াশুনা আর সাংসারিক ব্যস্ততার কারনে।কিন্তু বাবা প্রত্যেকদিন এসে দেখে যেতেন।আসলে মামার হঠাৎ এই বুকের ব্যথা ওঠে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াটা সবার জন্য ভীষণ ভয়ের ছিল।সুস্থসবল মানুষের হঠাৎ এমন হওয়ার কথা নয়।কিন্তু বাস্তবতায় তার উপর যে কতটা প্রেসার কাজ করছে প্রতিনিয়ত তা তিনিই ভালো বুঝেন।উপর দিয়ে হাসিখুশি দেখালেও ভেতরে উনার চিন্তাটা কতটুকু তা কেউ কখনো উপলব্ধি করতে পারবে না। দুটা ছেলে দুটা মেয়েকে মানুষ করে গড়ে তোলার দায়ীত্ব নেওয়াটা সহজ কিন্তু পালন করা এতটাও নয় ।ডাক্তার হঠাৎ এমন হওয়ার জন্য উনার স্ট্রেস আর টেনশন করাকে দায়ী করেছেন। আমি আজ কোচিংয়ে যাই নি।কারন, আমার ইচ্ছে ছিল সবার সাথে শেষ একবার দেখা করে যাওয়ার। সচারচর আমার খালামনিদের সাথে তেমন দেখা হয় না।মামার বাড়ী দাদার বাড়ীর পাশে বলেই প্রতি বছরেই গ্রীষ্মের ছুটিতে কিংবা ঈদে যাওয়া পড়ে।মামার বাড়ী যে রসের হাড়ি তা আমার মামার বাড়ী গেলে প্রতিবারই বুঝতে পারি। তাই সবাইকে বিদায় দিতে গেলাম হাসপাতালে।বিদায় দেওয়ার সময় খুব খারাপ লাগছিলো।আবার কবে দেখা হবে ঠিক নেই।বিদায় শেষে বাবা বললেন, -তুই একা বাসায় চলে যেতে পারবি না??বাবার অফিসে কাজ আছে কিছু।তোর জন্য রিক্সা ডাকি,দাঁড়া। -আরেহ রিক্সা লাগবে নাহ।বাসা কি বেশি দূরে নাকি যে হেঁটে যেতে পারব না।তুমি যাও অফিসে ,আল্লাহ হাফেয।(আমি) -আচ্ছাহ, সাবধানে যাবি।খোদা হাফেয। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।আমার হাসপাতালে গিয়ে বসে থাকাটা একদমই পছন্দ না।আর হাসপাতালগুলো যতই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুক না কেন আমার কাছে অস্বাভাবিক আর ঘিন ঘিন লাগে।এটি আমার অপ্রিয় জায়গাগুলোর মধ্যে একটি।শুধুমাত্র সবাইকে একবার দেখে আসার জন্যই আমার যাওয়া।যাই হোক হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে একটু স্বস্তিবোধ করলাম,আর হাঁটা ধরলাম বাসার উদ্দেশ্যে।হাঁটতে হাঁটতে চারিদিকটা দেখছিলাম,আর অনেক কিছুই চোখে পড়ছিল।তারমধ্যে একটা জিনিস আমাকে একটু ভাবনার জগতে নিয়ে গেল।এই হাসপাতাল রোডের বিপরীত পাশে একটা খাল রয়েছে যার পরেই আছে পরিত্যক্ত পড়ে থাকা এখানকার ডিগ্রী কলেজের হোস্টেল।শুনেছিলাম এটি অনেক বছর পুরোনো যা এখন একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।আমার বাবা নাকি কলেজে পড়াকালীন এই হোস্টেলেই থাকতেন।কলেজ শেষে উনি ঢাকা চলে যান।এর কয়েকবছর পরই নাকি এই হোস্টেলটা বন্ধ ঘোষনা করা হয়।এরপর থেকে এটি পরিত্যক্ত আজ পর্যন্ত।অবশ্যক পরিত্যক্ত বললে ভুল হবে।এটা এখন গরু ছাগলের বিচরন কেন্দ্র।জমিটা অনেক বড়।তাই প্রায় সময় ছাগল গরু এখানে দেখা যায়।আর এই পরিত্যক্ত হোস্টেলের ভিতরে একটি পরিবারও বসবাস করে।টিনের চালার ঘর তাদের।বুঝাই যায় গরিব অনেক।এই হোস্টেলের জমির মালিক এখানে থাকেন না যত সম্ভব।ইনারাই দেখাশুনা করেন এখন এই জমির। , হাঁটা অবস্থায় এসব ভাবছিলাম আমি।এর মধ্যে একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে পিছনে ফিরে তাকাই।বাচ্চাটি যতসম্ভব ৪ কিংবা ৫ বছর বয়সের হবে।সে তার মায়ের কোলে উঠার জন্য কাঁদছিল।কিন্তু দেখে বুঝা যাচ্ছিল মহিলাটির কিছু করার নেই এই মুহূর্তে।উনার একহাতে বাজারের ব্যাগ।তাই,আরেক হাতে এই বয়সের একটা বাচ্চাকে কোলে নেওয়া তার পক্ষে এতটাও সহজ কাজ নয়। তিনি বারবার স্বান্তনার স্বরে বলে যাচ্ছিলেন," আর একটু বাবা। এইতো বাসায় এসে গেছি।আর অল্প"কিন্তু বাচ্চাটা একগুঁয়ে স্বভাবের।কেঁদেই চলেছে।তবে উনার মাঝে আমি কোনো বিরক্তির ছাপ দেখতে পাই নি।মায়েদের খুব দারুন একটা বৈশিষ্ট তারা খুবই ধৈর্যশীল,যা উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল।মায়েদের মতন ধৈর্যশীল বাবারা সহজে হতে পারেন না।খুব কম পিতারই মায়েদের মত এমন ধৈর্য ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বাচ্চাটিকে বুঝ দিতে দিতে নিয়ে যাচ্ছেন।আমিও আমার পথে হাঁটা ধরলাম।এ শহরটা দেখতে ছোট হলেও খুবই ব্যস্ত আর অস্থিরতা বিরাজ করে সবসময় এখানে।মানুষগুলো ক্লান্ত হলেও শহরটা ক্লান্ত হয় না একদমই।প্রতিনিয়ত মানুষ তার স্বপ্নপুরনে ছুটে চলেছে এখানে। পরিত্যক্ত হোস্টেলের খালটার পরেই একটা সুন্দর বিল আছে।বিকালে সুর্যের কীরণ পশ্চিম আকাশে এই বিলটার উপরেই পড়ে।যেন কোনো সমুদ্র সৈকতে সূর্য অস্তের দৃশ্য।আমার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার সুযোগ হয় নি কখনো।কিন্তু প্রতিদিন আমি কোচিং থেকে বাসায় ফিরে আসার পথে সন্ধ্যায় মনে হয় যেন ঐ মনোরম দৃশ্যটাই উপভোগ করছি।আসলেই মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোজে জন্য দূর-দূরান্তরে পাড়ি দেয় ঠিকই কিন্তু তারা খেয়ালই করে নাহ তার ঘরের দুয়ারের বাহিরে সকাল বেলার সেই শিশির বিন্দুগুলোকে,যার উপর রোদের ঝলক পড়লে তা মুক্তোর মতই চিকচিক করে।কবির কথাটা আসলেই যথার্থ।আমরা মানুষ প্রাণীরা সত্যি অদ্ভুত। এসব ভাবতে ভাবতে বিলের উপর গাড়ানো বাঁশের উপর একটা মাছরাঙা পাখিকে লক্ষ্য করলাম।আচ্ছা, এই পাখিটা সত্যিই খুব অনন্য তাই না?? এর গায়ের নীলাভ উজ্জ্বল রঙের জন্যই খুব সহজেই মানুষের চোখে পড়ে।কিন্তু এরা সহজে কারো সামনে আসে নাহ।নিজের মত করে চলে।আমার মতে এরা অন্যান্য পাখিদের থেকে অনেক ভীতু আর লাজুক স্বভাবের।মাঝে মাঝে বড় পুকুর, খাল বা বিল এর উপর ছাড়া সহজে কোথাও দেখা দেয় না।এরা যখন পানিতে ঝাপটা মেরে ছোট ছোট মাছ ধরে নেয় তখন সত্যি ইচ্ছে করে সেই দৃশ্যটাকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে, নিজেকে ইচ্ছা করে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার তৈরি করে ফেলতে।মাছরাঙাটি নিশ্চয়ই ছোট মাছের খোজে বসে রয়েছে সেখানে।কতক্ষণ তাঁকিয়ে থেকে আবার হাঁটা ধরলাম আমি।এরমধ্যে আমার দুই বন্ধুর সাথেও দেখা হয়।তাদের সাথে আলাপালোচনা করে আবারও হাঁটা ধরলাম। , এখন আমি একটা পরিচিত ৩ তলাবিশিষ্ট বাড়ীর সামনে এসে উপস্থিত।বাড়ীটার দিকে তাকাতেই আমার চোখ আটকে যায়।উল্লেখ্য,বাড়িটাতে নয়,তার ছাদের দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার উপর।অপলক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল সে।হাল্কা বাতাসে তার চুলগুলো কিছুটা মুখর সামনে এসে গেছে।তখন আমার তাকে সাদা মেঘের ওপর অঙ্কিত এক অপরুপ চিত্রকর্ম মনে হচ্ছিল যেন এই চিত্রের মাঝে কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া নেই।তার আনমনে আকাশপাণে চেয়ে থাকাটা মনে হচ্ছিলো যেন এক মায়াবিনীর আকাশের নিকট প্রার্থনা, প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য বিলিয়ে দেওয়ার এই ভূপ্রান্তরের বুকে।আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে তাকে দেখতে দেখতে খেয়ালই হয় নি আমার মোবাইল এ কল আসছিল। শেষমেশ ঘোর কেটে উঠলো মোবাইলের আওয়াজেই।৫ টা মিস কল,৩ টা বাবার আর ২ টা আমার বড় খালার।ফিরে কল দেওয়া লাগে নি।বড় খালা নিজেই আবার দিলেন।কল ধরতেই আমি- -আসসালামুয়ালাইকুম,আন্টি। -ওয়াইলাকুম...............কিরে তুই কি বাসায় পৌছে গেছিস?? -না, আন্টি পথে। বাসায় যাচ্ছিলাম।কিছু বলবেন আন্টি??? -হ্যাঁ, তুই হাসপাতালের দিকে আরেকবার আয় তো।তোর আব্বুও আছে আমার সাথে আছে।তোর বাবা অফিসে যাবে দেরী হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি আয়। মন খারাপ হয়ে গেল। তাকে আরো কতক্ষণ দেখার ইচ্ছা ছিল।কিন্তু আর পারলাম কোথায়! -আচ্ছা,আসছি আন্টি।  বলেই আবার হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম।হাসপাতালের সামনে গিয়েই দেখি বাবা আর আন্টি দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন আমার জন্য। আমাকে দেখে বাবা, -তোর আন্টিকে নিয়ে বাসায় যা।উনি আমাদের বাসায় কয়েকদিন থাকবেন।তোর মা আমাকে কল দিয়েছিল।তাই অফিসে যাওয়ার পথে আবার ফিরে এসেছি। তোকে তোর আন্টিকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে তোর মা। এরপর আব্বু একটা রিক্সা ভাঁড়া করে আমাদের উঠিয়ে বিদায় দিলেন।বাবার বাসায় ফিরতে রাত হবে আজকে।অফিসে কাজ রেখে এমনিতেই হাসপাতালে অনেক সময় ধরে ছিলেন। রিক্সা চলছে আর আন্টিও তার কথা শুরু করে দিয়েছে।আন্টি আবার কম কথা বলে না।এ ব্যাপারে তিনি আমার মায়ের থেকেও এগিয়ে আছেন। মহিলা মানুষ তার উপর একটু বয়স্ক। তাই কথা বলার মতো মানুষ পেলেই শুরু করে। -তোর আম্মু তো তেমন একটা বাড়ীতে আসতে পারে না। তাই, আমাকে কল দিয়ে বলল দু-তিন দিনের এর জন্য তার সাথে থাকতে।তাই তোর মামা-মামি, আর অন্য খালাদের গাড়িতে উঠানোর পর তোর মাকে কল দিয়ে তোর বাবাকে আনালাম।তোর বাবাই আমাকে বাসায় পৌছে দিত।কিন্তু অফিসে কাজ আছে বলে তোকে আনাতে হল ।তাই,তোকে আসতে বললেন।তোকে কষ্ট দিলাম একটু। এক নাগাড়ে বলেই গেলেন উনি কথাগুলো।উনি আরো কিছু বলতে যাবেন আমি বলে উঠলাম, -না আন্টি,কোনো কষ্ট হয় নি,আপনি এতদিন পর আমাদের বাসায় আসছেন ভালো লাগছে।  আসলে ভালোই হয়েছে।ইদানিংকাল ধরে আমার মা একটু বিষন্নতায় থাকেন।সারাদিন ঘিরের কাজের ব্যস্ততায় নিজেকে একটু সময়ও দিতে পারেন না।রোজ রোজ একি কাজ করতে করতে ক্লান্ত আম্মু। আন্টি আসাতে এই একঘেয়েমিটা কিছুটা হলেও চলে যাবে।একটু মন খুলেও কথা বলতে পারবে। কিছুক্ষন চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলাম, -আন্টি, আপনার ডায়াবেটিসের এখন কী অবস্থা।নিয়ন্ত্রণে রাখেন তো?।(উনি ডায়াবেটিস রোগী যা এই বৃদ্ধ বয়সে প্রায় মানুষেরই হয় থাকে) -আছে,নিয়ন্ত্রণে। এটা যে কত কষ্ট যার হয় সেই বুঝে।একটু বেড়ে গেলেই শরীরের সকল শান্তি উধাও।  -হুম... এরপর রাস্তায় আর কোনো কথা বললাম না।আবার ঐ বাড়ীর সামনে দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম।প্রতিদিনই যাই কারণ আমাদের বাসা থেকে বাজারে যাওয়ার এটাই একটা পথ । ভেবেছিলাম এখন হয়তো মেয়েটা চলে গেছে,কিন্তু না এখনো দাড়িয়ে আছে, সেই ঠিক একি জায়গায়। আমি আবার তাকাতেই মেয়েটির চোখে চোখ পড়ল।বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি নি রিক্সায় ছিলাম বিধায়। কিন্তু এই অল্প মুহুর্তে তার চোখ থেকে আমার চোখ সরাতে পারি নি।রিক্সা সরে আসাতে পিছনে ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করছিল,কিন্তু তাকাই নি।সাহস হয় নি আর আমার।কিন্তু চাহনির মূহুর্তটুকু যে আমায় কোন জগতে নিয়ে গিয়েছিল আমার মাথায় ঢুকছিলো না।বাসায় এসেও শুধু চোখ দুটোই ভেসে উঠছিল মাথার ভেতর।কারো সাথে তেমন কথা না বলে সোজা নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।ইতিমধ্যেই আমার মা বোন বড় খালা মানে আন্টির সাথে গল্প আরম্ভ করে দিলেন।মেয়েদের সাঁজ আর কথা বলার সময় বোধহয় জীবনেও ফুরোয় না।এক নাগালে কথা বলেই চলেছেন উনারা।মনের যত আনন্দ-বেদনা,সুখ-দুঃখ সব এই এক বসাতেই বলে শেষ করবেন বোধ হয়।আমার ঐ দিকে কোনো খেয়াল নেই।তাদের কোনো কথা যেন আমার কানেই আসছে না।ভাবছিলাম শুধু চোখ দুটোর কথা।কারো চোখে এত মায়া কী করে হয়! তার চোখ দুটো কাজল কালোহরিণী হলেও এর গভিরত্বে আমি যেন এক শান্ত নীল সমুদ্র দেখতে পেয়েছিলাম।তার চোখের বর্ণনা করতে গেলে হয়তো আমার এক উপন্যাস লেখা হয়ে যাবে।তার মায়াবী কালোহরিণী চোখের গভীরত্বে নীল সমুদ্র যেন আমাকে অম্লান করে তুলছে।ঐ চোখ দুটোকে আবার দেখার জন্য আমার মন কেমন অস্থির হতে শুরু করল।অনেক কষ্ট হচ্ছিল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। নীলনয়নী নাম টা মনের ভেতর বেজে উঠল।তার চোখের নীল সমুদ্রটা আমার মতো করে কেউ দেখতে পাবে না।তাই,তাকে আমি নীলনয়নী নাম দিলাম নিজের ইচ্ছের ডায়েরীটাতে। আসলে,আমি মেয়েটাক চিনি।অনেক আগেই তার প্রেমে পড়ি।কিন্তু আজকের মত তাকে কখনো অনুভব করি নি।তার দিকে এক নজরে চেয়ে থাকিনি।তার চোখে এভাবে তাকাই নি আগে।ফেইসবুকে আমার সাথে ফ্রেন্ড ছিলো।তাকে আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করানোর জন্যও কত যে কাহিনী করতে হয়েছিল আমার তা না হয় নাই-ই বললাম,মনে পড়লেই হাঁসি পায় আমার।আগে কোচিং সকালে ছিলো।তখন তার বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা হয়ে যেত।তবে কোনোদিন কথা বলার সাহস পাই নি, সে নিজেও বলে নি।শুধু ফেইসবুকেই যত কথাবার্তা।আমি তাকে বুঝতে দেই নি কখনো আমি তাকে ভালোবাসি।বুকের ভেতরেই গোপন রেখে দিয়েছি সব কথা।শুধু মাত্র বন্ধুই ছিলাম তার।এরপর কোচিংয়ের সময় সকাল বেলায় বাদ দিয়ে বিকেলে দেওয়া হল।তার দেখা পাওয়াও হয়ে গেল দুষ্কর।ফেসবুকই একমাত্র সম্বল আমার যা তার সাথে সাথে কথা বলার একমাত্র মাধ্যম আমার কাছে।কিছুদিন আগে সে তার ফেইসবুক আইডিটাও ডিঅ্যাক্টিবেট করে দেয়।তার ফ্রেন্ড থেকে জানতে পারলাম ফ্যামিলি ম্যাটার।তাই, পরীক্ষার আগ পর্যন্ত আর ফেইসবুক হয়তো ব্যবহার করবে না।তখন যে কত খারাপ লেগেছিলো নিজের কাছে!!!  আজ অনেকদিন পর তার দেখা পেলাম।তাই, প্রানভরেই দেখতে চেয়েছিলাম তাকে।কিন্তু তাও পারলাম না।জানি নাহ, কখনো বলতে পারব কিনা যে আমি তাকে কত টা চাই। প্রথম কোনো মেয়ের চোখে তাকিয়ে আমি আমার কবিতার ছন্দ হারিয়ে ফেলি।আমার গল্প লেখার অভ্যাস নেই,কিন্তু কবিতা লেখাটা আমার অনেক আগের নেশা।কিন্তু এই প্রথম আমি নীলনয়নীর জন্য কবিতা লিখতে গিয়ে নিজের ছন্দ হারিয়ে ফেলি,যা আগে কখনো ঘটে নি।তাই, গল্পতেই আমার অনুভূতি লেখার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।নীলনয়নীর কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যে আমার ঘুম চলে এল বুঝতেই পারিনি।সেই বিকেলে ৫:৪৫ এরপর যে ঘুম দিলাম এখন রাত ১১ টায় ঘুম থেকে উঠেছি মায়ের ডাকে।অবাক লাগে, এতক্ষণ ধরে ঘরের একটা লোকজনও আমায় ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করেনি।আর অন্য সময় আমি রাত ১১ টার আগে ঘুমোতে গেলেই আব্বুর কাছে বিচার যায় আমি পড়াশুনা না করে ঘুমিয়ে ছিলাম সারা সন্ধ্যা(যদিও কথাটা একদম মিথ্যে)।আন্টি মানে আমার মায়ের বড় বোন আজ ২ বছর পর আমাদের বাসায় এসেছেন।তাই, মা একটু বেশিই প্রফুল্লতায় আছেন।আমিও তাদের সাথে আড্ডায় যোগ দিলাম। বাবা রাতে অফিস থেকে ফিরতে দেরী করেন, তাই আমাদের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমোতে রাতের বারোটা বা সাড়ে বারোটা বেজে যায়।আমার আবার আব্বুকে ছাড়া রাতে খেতে ইচ্ছে করে না।তাই,আব্বু আসলেই একসাথে খেতে বসি।এখন আবার ঘুমোতে যাব।জানি, এত ঘুমের পর আবার ঘুম আসার কথা না।কিন্তু তার কথা মনে করতে করতে ঠিকই ঘুম ফিরে আসবে চোখে ।প্রতি রাতে শুধু আবার অপেক্ষা নতুন এক সকালের, আরেকটা দিন তাকে দেখতে পাওয়ার সুযোগের অপেক্ষা।অন্তত,অপেক্ষা কখন সে আবার ফেইসবুকে ফিরে আসবে,একটু কথা বলতে পারব তার সাথে।কখন হৃদয়ের সকল কিছু তার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে বলতে পারব ভালোবাসি।জানি নাহ, এ অপেক্ষার শেষ কখনো দেখতে পাব কিনা, হৃদয়ের ডায়েরীটা কখনো পুর্ণ করতে পারব কিনা।শুধু আড়ালেই ভালোবেসে চলেছি আমার নীলনয়নীকে।চিরকাল বাসবোও।

. #নীলনয়নী . ®মাহাদী_জিদান

মন্তব্যসমূহ