হিরর / পর্ব ১

এক
গ্রীষ্মের রাত।
ফ্যান ঘুড়ছে। ঘাম পড়ছে আবিরাম।টেবিলের চারদিকে কাগজ আর কাগজ। আমার মাথার উপড় এনার্জি ভাল্বটা ঝজকমকিয়ে জ্বলছে। আমি অতিরিক্ত গরমের কারণে আমার অস্থিরতা আরো বাড়ছে।

' খট্ খট্ খট্!!! '

শব্দে আমি চমকে গেলাম খুব।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে। যত দেরী করছি শব্দটা আরো জোরে প্রসারিত হচ্ছে। ঘামে আমার টি-শার্ট পুরো ভিজে গেছে।  প্রায়ই দুমিনিট পর আমি দরজা খুলতে গেলাম। খুলে দেখি কোন খারপ কিছু না। আমার রুমমেট।
সঞ্জু। আমি তাকে দেখে পুরো থ হয়ে গেলাম। আর তাকে জরিয়ে ধরে বললাম, 'ভাই তুই আমাকে বাঁচালি। '

'ওকে। ওকে। তুই কেন আমার ছুটি ধ্বংস করলি। কত সুন্দর আমি   বাড়ি ভালো ভালো খাবারের সাথেই ভালোই ছিলাম। ' বলল সঞ্জু । 

'ভাই তুই যদি আর দু'তিন পর আমার কাছে ফিরতি। তাহলে আমাকে জীবন্ত পেতি না। আর দেখা হতো না তোর সাথে।'  খুবই সিরিয়াস ভাবে বললাম আমি।

' সমস্যাকি রায়হান?  ঘামে তোর শরীর ভিজে একাকার। '  বলল সঞ্জু।

'ভাই আগে ভিতরে আয় ফ্রেশ হয়েনে। আমি এতক্ষণ মারাত্মক ভয়ে ছিলাম। আমিও একটু জিরিয়ে নেই।' বললাম আমি।

আমি ফ্যানের নিচে আবার বসলাম।আমাদের কোন খাট নেই। নিচে মেঝেতে তোষকের উপড় আমরা ঘুমাই। ফ্যানটা অনেক উপড়ে থাকায় বাতাস আমার কাছে পুরোটা আসছে না। তারপরও কিছুক্ষণ আগের চেয়েও ভালোই লাগছে। টিশার্টটি চেঞ্জ করে নিলাম।এর মধ্য সঞ্জুও এসে পড়লো।

'রায়হান পুরো কাহিনীটা বলো। '

'কাহিনীটা ছিলো আজ থেকে প্রায়ই একমাস আগের। আমি তোদের আনন্দ ফূর্তি  আর পড়ালেখা করে ভালো কাটছিল জীবন। তোরা ছাড়াও আমার জিবনে আরেকটা স্বপ্ন ঝাঁক বেধে বসে ছিলো। যার নাম 'সাহিত্য' যেটা তোরা সবাই জানিস লিখালিখির প্রতি আমার একটা টান বিদ্যমান।  যাইহোক আর পাঁচটা সাধারণ লেখদের মতোই আমি ফেসবুকের মাধ্যমে আমার টেলেন্ট দেখানোর চেষ্ট করছি। লেখালিখি প্রথম প্রথম কেউই ভালো করতে পারেনা। আমি থ্রিলার,  রহস্য, নভেলা ও গোয়েন্দা বইয়ের প্রতি আমার ভালোবাসা সবসময় রয়ে গেছে।আর আমি ফেসবুকে লেখালিখি করার সময় আমি থ্রিলারই লিখতাম। তো আমি বেশ কিছুদিন দেখলাম আমার কোন উন্নতি হচ্ছে। তাই খুব হতাশার সাথে পোষ্ট করলাম যে, 'আমার গল্পে সমস্যা কি?' পোষ্টটা সব নেগেটিভ পজিটিভ সবাই কমেন্ট করেছে। কিন্তু একটা কমেন্ট আমার মন কেড়েছে। সেটা হলো, 'আপনি প্রতি বরাবরি  ডিটেকটিভ টাইপ লিখতে লিখতে হয়তো পাঠক বোর হয়ে গেছে। ভাই আপনি নতুন থীম নিয়ে লিখেন।'
আমি রিপ্লেইতে বললাম,'আমি একটা থীম বেছে।'
তিনি রিপ্লাই দিলেন,  'আমার সাজেষ্ট হরর'
মাথায় আইডিয়াটা ভালোই ছিলো দারুন একটা গল্প থেকেই যত কাহিনী।  '
এইটুকু আমি পানি খেয়ে নিলাম।

দুই

পানি খেয়ে আবার শুরু করলাম, 'গল্পটা ছিলো এরকম, শীতের রাতে এক অন্ধকারে মোস্তফা সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলো বাড়ির দিকে এই সময় তার সাইকেলের ঠিক সামনে একটা বিদঘুটে কালো একটি বিড়াল। একটি অস্বাভাবিক দেহ এই বিড়ালটি। কালো কুট কুটেতার কাছে আছে একটি লাইট।সেই লাইটের আলোতে দেখতে পাচ্ছে সেই বিড়ালটিকে । মোস্তফার পথ ছাড়চ্ছেনা। মোস্তফা অত্যন্ত সাহসী হওয়ার কারণে সে অতোটা ঘাবড়ে যায় নি। বিড়ালটির পাশ দিয়ে চলে যায় মোস্তফা।কিন্তু সে অনেকটা ভয় পেয়েছে সে। কিছুদূর যাওয়ার পর সে বিড়ালটি আবারো সেখানে দেখতে পেলো। এবার খুব ভয় পেয়ে যায় মোস্তফা। সে আবার বিড়ালটিকে টপকে চলে গেলো। খুবই তাড়াতাড়ি সাইকেল চালাচ্ছে। হঠাৎ সে তার পাশে খেয়াল করলো তার সাথে বিড়ালটিও দৌড়াচ্ছে। মোস্তফা যানে একটি বিড়াল কখনওই সাইকেলের গতিতে দৌড়াতে পারেনা। সে তার সাইকেলের গতি আরো বেড়িয়ে দিলো।  বিড়ালটা তার সাইকেল অতিক্রমে করে যাচ্ছে।মোস্তফা তার শরীরে সর্বোচ্চ শক্তি সাইকেল চালাচ্ছে। হঠাৎ সাইকেলের প্যাডেলের চেইন ছিড়ে গেছে।কিন্তু সাইকেল থামছে না।অবিরাম চলছেই চলছে। মোস্তফার শার্টটা ঘামে একদম ভিজে গেছে।সে পাশে তাকিয়ে দেখলো বিড়ালটি আর নেই।আর তার লাইটের আলোও হঠাৎ নিভে গেল।সে অন্ধকারে চলছে। প্যাডেল  সে না চাপলেও সাইকেল খুব গতি চলছে খুব অন্ধকারে।হঠাৎ রাস্তায় গর্ত ছিলো লাইটের আলো না থাকায়। গর্তের কারণে পড়ে গেল মোস্তফা।সে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে। তারপর রাস্তা থেকে চিৎকার শুরু করে।' কেউ আছেন? আমার দয়া করে সাহায্য করুণ।  আমাকে একটু সাহায্য করুন।'
চিৎকার চিৎকার পুরো গলাটা ভেঙ্গে চৌচির।  পানি তৃষ্ণা পেয়েছে খুব। তাই আর চিৎকার করতে পারছে না।

হঠাৎ কোন মানবের কন্ঠ।' কে রে...' এ শুনে তার প্রাণটা জুড়ে গেল।
' এইযে ভাই আমি এই পাশে। ' এইটুকু কথাটা মোস্তফার অর্ধেক জান বেরিয়ে গেলো।
লোকটা তাড়াতাড়ি এদিকে এসে মোস্তফাকে তুলে নিলো।আর বলল, 'ভায় আফনে এদিকে কিভাবে আইলেন?'
মোস্তফা কোন কথা বলার জোর পেলো না। শুধু কোকাচ্ছিলো। মোস্তফার খারাপ অবস্থা দেখে লোকটা তার বাড়ির নিয়ে গেলো। 

তিন
কোন মতে অনেক কষ্টে মোস্তফা আর তার সাইকেলকে অনেক কষ্টে বাড়িতে নিয়ে আসলো লোকটা।মোস্তফাকে পানি খেতে দেওয়া হয়েছিলো।
মোস্তফা লোকটাকে ভাঙ্গা কণ্ঠে বলল, 
' ভাই আমার কোথায়? '
' আমার সাইকেলের চেইন ছিড়ে যাওয়ার কারণে আমি আর আমার সাইকেল নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই। বাগানে গাছের সাথে ধাক্কা খেলাম। '
' কি বলেন ভাই। আপনার সাইকেলের চেইনতো ঠিক আছে। '
' উল্টা পালটা কথা বলেন।'
' আপনার বিশ্বাস না হলে আপনি আইসা দেখতে পারেন।'
'ধুর।' মোস্তফা ল্যাংড়িয়ে ল্যাংড়িয়ে হাটতে হাটতে সাইকেলের কাছে গেল। লোকটির হারিকেনের কারণে সব কিছু স্পষ্ট  দেখা যায়।হ্যাঁ।লোকটি সত্যি বলছিলো।  সাইকেলের চেইনতো ঠিক আছে।

চলবে...

writer: শুক্ষকোন আহম্মেদ

মন্তব্যসমূহ